৭১ বছরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে মাত্র তিন সিনেমা!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঝরিয়ে দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। একমাত্র বাঙালিরাই এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা হোক- এই দাবি আদায়ে রাজপথে জীবন দিয়েছিলেন রফিক, শফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা অনেকে। ভাষা আন্দোলন থেকেই বীজ বোনো হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের।

দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের গল্প নিয়ে গত ৫২ বছরে অসংখ্য সিনেমা নির্মিত হয়েছে। সেগুলো দেখে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে। এটি খুবই আশার কথা। কিন্তু যেই আন্দোলন থেকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীজ বোনা হয়েছিল, সেই ভাষা আন্দোলন বা ২১ ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপট নিয়ে হয়নি তেমন কোনো সিনেমা!

গত ৭১ বছরে ভাষা আন্দোলন নিয়ে মাত্র তিনটি সিনেমা নির্মিত হয়েছে। প্রথমটি ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জীবন থেকে নেয়া’। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান পরিচালিত ও প্রযোজিত এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন রাজ্জাক, সুচন্দা, আনোয়ার হোসেন, শওকত আকবর, রোজী সিদ্দিকী, খান আতাউর রহমান, রওশন জামিলের মতো তুখোড় অভিনয়শিল্পীরা।

ভাষা আন্দোলন নিয়ে পরের ছবিটি হয় ২০০৬ সালে। নাম ‘বাঙলা’। এটি নির্মাণ করেন শহীদুল ইসলাম খোকন। এর তিনটি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন মাহফুজ আহমেদ, চিত্রনায়িকা শাবনূর ও তৎকালীন শীর্ষ খল অভিনেতা হুমায়ূন ফরীদি। আরও ছিলেন ওয়াহিদা মল্লিক জলি, ফখরুল ইসলাম, উপমা, আহসানুল হক মিনু, মিল্টন খন্দকারসহ অনেকে।

২১ ফেব্রুয়ারির প্রেক্ষাপটে সবশেষ সিনেমাটি নির্মাণ করেন অভিনেতা ও নির্মাতা তৌকীর আহমেদ। ২০১৯ সালে মুক্তি পাওয়া সে ছবির নাম ‘ফাগুন হাওয়ায়’। এখানে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সিয়াম আহমেদ, নুসরাত ইমরোজ তিশা, আবুল হায়াত, শহীদুল আলম সাচ্চু, ফজলুর রহমান বাবু ও ভারতের যশপাল শর্মাসহ অনেকে। ছবিটি প্রযোজনা করেন ফরিদুর রেজা সাগর।

বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভাষা আন্দোলন নিয়ে নির্মিত তিনটি ছবিই আগ্রহ নিয়ে দেখেছেন বাংলাদেশের দর্শক। তাছাড়া গত কয়েক বছরে বিশ্বব্যাপী ইতিহাস ও ঘটনানির্ভর চলচ্চিত্র নির্মাণ বেড়েছে। পাশের দেশ ভারতের নির্মাতারাও তাদের জাতীয় জীবনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সময় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন। সেগুলো ভালো ব্যবসাও করছে।

অথচ ভাষা আন্দোলনের মতো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে গত ৭১ বছরে মাত্র তিনটি ছবি কেন নির্মিত হলো, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠছে আজকের এই দিনে। এক্ষেত্রে সরকারি কোনো উদ্যোগও দেশ স্বাধীনের পর থেকে দেখা যায়নি।

এদিকে টিভি চ্যানেলগুলোতেও প্রতি বছরে প্রচার হয় ভাষা আন্দোলন নিয়ে দুই-একটি নাটক। অথচ বাঙালির কাছে গুরুত্বহীন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে অসংখ্য নাটক প্রচার করে চ্যানেলগুলো। দেশের একটি জাতীয় দিবস নিয়ে সর্বমহলের এমন উদাসীনতা ইতিহাস থেকে দূরে রাখবে নতুন প্রজন্মকে- অন্তত এমনটাই মনে করছেন ইতিহাসবোদ্ধারা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title