নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকার বাজার, স্কুল, কোচিং বা মাদ্রাসার সামনে ওত পেতে থাকতেন তাঁরা। মা-বাবার পরিচিত বা আত্মীয়-বন্ধু পরিচয় দিয়ে শিশুদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতেন। ফল–মূল কিনে দেওয়ার কথা বলে সুযোগ বুঝে শিশুকে করতেন অপহরণ। এভাবে গত ৬–৭ বছরে ৫০০ থেকে ৬০০ শিশু অপহরণ করেছে চক্রটি। অপহরণের পর অপহৃত শিশুর মা-বাবাকে কল করে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে আবার বাসার কাছাকাছি ছেড়ে দিতেন চক্রের সদস্যরা।
সম্প্রতি উত্তরা থেকে এক শিশু নিখোঁজের সাধারণ ডায়েরি তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রের সন্ধান পায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগ। গতকাল শুক্রবার গাজীপুরের শালনা থেকে চক্রের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চক্রের মূল হোতা মো. মিল্টন মাসুদ (৪৫), মো. শাহীনুর রহমান (৩৮) ও সুফিয়া বেগম (৪৮)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ২টি মোবাইল ফোন ও অপহরণের কাজে ব্যবহৃত ৫টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়।
আজকের পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
আজ শনিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উত্তরা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোর্শেদ আলম।
গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যেরভিত্তিতে পুলিশ বলছে, যে শিশু তার মা-বাবার মোবাইল নম্বর মুখস্থ রাখতো শুধু তাদেরকেই অপহরণ করতেন তাঁরা। অপহরণের পর মারধর কিংবা নির্যাতন করতেন না অপহরণকারীরা।
মোর্শেদ আলম বলেন, গত ২৪ মার্চ রাজধানীর উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরের হলি ল্যাবের সামনে থেকে ৬ বছরের শিশু শাহিন শেখ হারিয়ে গেলে এ সংক্রান্তে একটি জিডি করা হয় উত্তরা পূর্ব থানায়। জিডি তদন্তের সূত্র ধরে প্রথমে অপহরণকারী চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। উত্তরা এয়ারপোর্ট জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে উত্তরা পূর্ব থানার একটি টিম তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিদের শনাক্তের পর অভিযান পরিচালনা করে চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারে করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানান, তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, বাজার, রেস্টুরেন্টসহ নানা জায়গায় একা থাকা ও বাবা মায়ের সঙ্গে ঘুরতে থাকা শিশুদের টার্গেট করে কৌশলে অপহরণ করে তাদের পরিবারের কাছ থেকে বিকাশ, নগদসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিপণ আদায় করে আসছিলেন।
মোর্শেদ আলম আরও বলেন, চক্রের মূল হোতা মো. মিল্টন মাসুদ ও তাঁর সহযোগী মো. শাহীনুর রহমান ৬ থেকে ৭ বছর ধরে ৫০০ থেকে ৬০০ শিশুকে অপহরণ করেন।
অপহৃত শিশুদের সঙ্গে আসামিরা ভালো ব্যবহার করতেন জানিয়ে ডিএমপির এই কর্মকর্তা বলেন, টার্গেটকৃত শিশুকে তার বাবা-মায়ের বন্ধু কিংবা ব্যবসায়িক পার্টনার বলার একপর্যায়ে শিশুর মা-বাবার আর্থিক অবস্থা কৌশলে জেনে নিতেন তাঁরা। এরপর কৌশলে নম্বর নিয়ে শিশুর মা-বাবাকে ফোন দিয়ে অপহরণ হয়েছে জানিয়ে টাকা দাবি করতেন।
পুলিশ জানায় সাধারণত ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করতেন তাঁরা। বাবা-মা ভয়ে তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিত অপহরণকারীদের কাছে। টাকা দেওয়ার কিছু সময় পরে দেখা যেত অপহৃত শিশুটি বাসায় ফিরে এসেছে। কোনো বাবা-মা যদি টাকা নাও দিত পারতেন তবু তাঁদের সন্তান ফেরত চলে আসত বলে কয়েকটি অভিযোগ খতিয়ে দেখে জানা গেছে।
অপহরণকারীরা দীর্ঘদিন ধরে একই কাজে অভিজ্ঞ হওয়ায় একাধিক অভিযান পরিচালনা করে তাঁদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছিল না বলে জানায় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রযুক্তি ও গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁদের অবস্থান শনাক্ত করে অভিযান পরিচালনা করা হয়। গ্রেপ্তার মিল্টন মাসুদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে ৫টি এবং শাহীনুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩টি করে ঢাকা ও গাজীপুরে মামলা রয়েছে।