৫ মাসেই সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন

ঢাকা: ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত মাত্র পাঁচ মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২৬ শতাংশ বেশি। জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, বাজেট ঘাটতি মোকাবিলায় সরকার বরাবরের মতো এবারও সঞ্চয়পত্রকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। ঘাটতি বাজেটে অর্থায়নে বৈদেশিক সহায়তার বাড়ার কথা বলা হলেও তা তেমন বাড়েনি বরং বেড়েছে সঞ্চয়পত্র নির্ভরতা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৬৬৬ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু গত পাঁচ মাসে গড়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৮০৯ কোটি টাকা। এভাবে চললে বছর শেষে সরকারের এইখাত থেকে নিট ঋণের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘বর্তমানে আমানত সুদের হারসহ অন্য সব ক্ষেত্রেই সুদের হার কমে গেছে। তাই বড় সংখ্যক মানুষের নির্ভরতার জায়গা সঞ্চয়পত্র।’

তিনি বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে শুরু থেকেই ধারাবাহিকভাবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ার প্রধান কারণ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স। করোনাকালে গত কয়েক মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে প্রবাসীরা সঞ্চয়পত্রকে বেছে নিয়েছেন। এতে করে রেমিট্যান্সের টাকা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হচ্ছে।‘

আহসান এইচ মুনসুর আরও বলেন, ‘ব্যাংকে আমানত রাখলে আগে ৮ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যেত। বর্তমানে তা কমে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সঞ্চয়পত্রে এখনো ১০ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়।’

তিনি বলেন, ‘বিকল্প অর্থায়নের উৎস খোঁজার চেষ্টা থাকলেও সরকারের সামনে এখনো তেমন বিকল্প নেই। তবে, সঞ্চয়পত্রের বাণিজ্যিক বিক্রি বন্ধ না কমানো গেলে সরকারের দায় বাড়বে। যা এক সময় সামাল দেওয়া কঠিন হবে।’

এদিকে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়ছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আগস্ট বেড়ে হয়, ৩ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ৪ হাজার ২০৭ কোটি টাকা, অক্টোবরে ৪ হাজার ৩৪ কোটি টাকা এবং সবশেষ নভেম্বরে ৩ হাজার ৪০২ কোটি ৫৭ লাখ টাকার নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ১৯ হাজার ৪৫ কোটি টাকা। এটা মোট লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ দশমিক ২২ শতাংশ।‘

সূত্র জানায়, সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরতে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নতুন সীমা নির্ধারণ করে দেয়। ফলে এখন একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকার এবং যৌথ নামে এক কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাচ্ছে না। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রির চাপ কমাতে গত বছরের ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার উপর উৎসে করের হার ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। একইসঙ্গে ১ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে টিআইএন (কর শনাক্তকরণ নম্বর) বাধ্যতামূলক করা হয়। আবার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকলে সঞ্চয়পত্র বিক্রি না করার শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তারপরেও চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে বাড়ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে।

সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘাটতি ধরা হয় এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ ভাগ। ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে সংগ্রহের লক্ষ্য ধরা হয় ৮০ হাজার ১৭ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৮৪ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত ২৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ লক্ষ্য ধরা হয় ২০ হাজার কোটি টাকা।

অন্যদিকে সঞ্চয় অধিদফতর ২০২০-২১ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মোট লক্ষ্য ধরেছে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে সুদ-আসল বাবদ শোধ করতে হবে ৬৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এই ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে।

উল্লেখ্য, ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ৬৭ হাজার ১২৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। এরমধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ ৫২ হাজার ৬৯৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এ হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সঞ্চয় অধিদফতর ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮৬ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এরমধ্যে সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করতে হবে ৬৬ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এই ২০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title