নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৪০ কোটি টাকার ওষুধ কিনছে সরকার। সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে এই ওষুধ সরবরাহ করা হবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে ২৭ প্রকার ওষুধ কিনবে। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) অপারেশনাল প্ল্যানে ২০২০-২১ অর্থবছরে জিওবি (উন্নয়ন) খাতের আওতায় এই ওষুধ কেনা হবে। সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার কমিটির আজকের বৈঠকে এই কেনার বিষয়টি অনুমোদন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল ফরমেটে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সূত্র জানায়, গ্রামীণ দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন ‘কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি)’ অপারেশনাল প্ল্যানের (ওপি) আওতায় দেশের সব উপজেলায় মোট ১৩,৮৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিক চালু রয়েছে। লাইন ডাইরেক্টর, কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) কর্তৃক গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ২৭ প্রকার ওষুধসংবলিত প্রতি কার্টন ১৭,৩৪০.৮৪৫৫ টাকা হিসেবে মোট ৮০,৭৩৪ কার্টন ওষুধ সর্বমোট ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকায় ক্রয়ের প্রস্তাব স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ওষুধ সরবরাহের জন্য সিবিএইচসি ওপিতে জিওবি (উন্নয়ন) খাতে ১৪০ কোটি টাকার সংস্থান রয়েছে । ২০২০-২১ অর্থবছরে কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য প্রকিউরমেন্ট প্ল্যানে ওষুধ কেনার বিষয়টির প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের জন্য অনুমোদিত তালিকার সব ওষুধ এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড থেকে কেনার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী ১৩,৮৮১টি কমিউনিটি ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহের জন্য ক্রয়কারী (লাইন ডাইরেক্টর, সিবিএইচসি) কর্তৃক পিপিআর-২০০৮ এর বিধি ৭৪, ৭৫ ও ৭৬ অনুসরণে সরাসরি ইডিসিএল থেকে ওষুধ কেনার জন্য ২৭ ধরনের ওষুধের একক দর প্রস্তাব পাঠানোর জন্য ইডিসিএলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ওই প্রস্তাবের আলোকে ইডিসিএল গত ৩১ জানুয়ারি ২৭ ধরনের ওষুধের একক দর প্রস্তাব দাখিল করা হয়। ওই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি) এবং এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) এর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় একক মূল্য নেগোসিয়েশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ২৭ ধরনের ওষুধের একক মূল্য ইডিসিএল কর্তৃক প্রস্তাবিত একক মূল্যের উপর ৭.৫ শতাংশ কম হারে প্রযোজ্য হবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
আলোচ্য প্যাকেজের বিপরীতে ইডিসিএল কর্তৃক দাখিলকৃত দরপ্রস্তাব মূল্যায়নের জন্য গঠিত দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইডিসিএল-এর দাখিল করা প্রতিটি আইটেমের প্রস্তাবকৃত একক মূল্যের উপর ৭.৫ শতাংশ কম মূল্য প্রযোজ্য হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) ২৭ ধরনের ওষুধসংবলিত প্রতি কার্টন ১৭ হাজার ৩৪০ দশমিক ৮৪ টাকা হিসেবে মোট ৮০ হাজার ৭৩৪ কার্টন ওষুধ মোট ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকায় ক্রয়ে সুপারিশ করে। ওই টাকার মধ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ৫শতাংশ অগ্রিম আয়কর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি ৭৬ (১) (ছ) অনুযায়ী ‘বিশেষ ক্ষেত্রে সরকারি মালিকানাধীন শিল্প ও কারখানায় সংযোজিত ও উৎপাদিত পণ্য ও সংশ্লিষ্ট সেবা সরকারের নিজস্ব অর্থে ক্রয় করা হইলে’ শর্ত প্রতিপালন সাপেক্ষে, ক্রয়কারী কেবল একজন সরবরাহকারী বা ঠিকাদারকে দরপত্র দাখিলের জন্য আহ্বান জানাতে পারবে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০১০ সালের ১৬ মার্চ তারিখের এক নির্দেশনায় উল্লেখ আছে যে, সব সরকারি প্রকিউরমেন্ট এর ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্রয় করতে হবে। এই নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করে স্বল্প সময়ে অধিকতর স্বচ্ছতার সাথে সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) প্রস্তাবিত ওষুধ কেনার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ।
অর্থ বিভাগ কর্তৃক অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা অনুযায়ী ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে সব পণ্যের ক্রয় প্রস্তাব সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিবেচনার জন্য পাঠাতে হবে। ক্রয় ও বিতরণের সুবিধার্থে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে সরাসরি ক্রয়পদ্ধতিতে প্রস্তাবিত ওষুধের সর্বমোট দাম ১৩৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮২০ টাকা হওয়ায় পিপিআর-২০০৮ বিধি ৩৬ এর উপবিধি (৩) (৩) এর (অ) ও (আ) অনুসরণে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে বলে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।