সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও আমেরিকা প্রবাসী সমাজ সেবক মরহুম পারভেজ খানের ৮ম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল শনিবার মরহুমের ছোট ভাই সৈয়দপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দিলনেওয়াজ শহরের মুন্সিপাড়া এলাকায় দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে এ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়াও শহরের অন্যান্য এলাকায় ঘরে ঘরে গিয়ে ইফতার সামগ্রী দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, সৈয়দপুর শহরের মুন্সিপাড়া মহিলা কলেজ সংলগ্ন এলাকার মরহুম নাঈম খানের জ্যেষ্ঠ ছেলে পারভেজ খান ছিলেন অত্যন্ত মানবতাবাদী উদার মনের মানুষ। সুদূর আমেরিকার নাগরিকত্ব নিয়ে সেখানে ব্যবসা করার পাশাপাশি নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেড প্রতিষ্ঠাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহবানে সাড়া দিয়ে তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন “কেপি ইন্টারন্যাশনাল” নামের শিল্প প্রতিষ্ঠান। যেখানে কর্মসংস্থান হয় প্রায় ২ হাজার স্থানীয় শ্রমিকের। এছাড়াও তিনি সৈয়দপুরে গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান।
সৈয়দপুরের সাধারণ মানুষকে তিনি অত্যন্ত ভালোবাসতেন। যে কারণে অধিকাংশ সময় আমেরিকার বিলাসবহুল সুযোগ সুবিধাকে উপেক্ষা করে সৈয়দপুরেই অবস্থান করতেন। এখানকার সর্বস্তরের লোকজনের সাথে ছিলো তাঁর অন্যরকম সখ্যতা। বিশেষ করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের মাঝে ছিলো তাঁর অবাধ মিলামিশা। যে কেউ যে কোন প্রয়োজনে যে কোন সময় তাঁর দ্বারস্থ হলে কখনই বিমুখ হতোনা। সবসময়ই তিনি সকলের সহযোগিতায় অবলীলায় হাত বাড়িয়ে দিতেন।
তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে তাঁর কেন শত্রু ছিলো বলে কেউ বিশ্বাস করেনা। ছোট-বড়, ধনী-গরিব, হিন্দু-মুসলিম, বাঙালী-বিহারী কোন ভেদাভেদ ছিলনা। তিনি সকলকে সহজেই আপন করে নিয়ে একেবারে মনের মাধুরি দিয়ে ভালোবাসতেন। এই কারণে তিনি সর্বস্তরের মানুষের কাছে “খান ভাই” হিসেবে এক নামে পরিচিত ছিলেন।
এই পরোপকারী বিশাল মনের অধিকারী মানুষটি ২০১৩ সালের এই দিনে সৈয়দপুরবাসীকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি জমান মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার সান্নিধ্যে। তাঁর চির বিদায়ে সেদিন আপামর জনগন কেঁদে বুক ভাসিয়েছে তাদের অতি আপনজনকে হারিয়ে। আজও অনেকে কাঁদে তাঁর বিরহে। কথায় কথায় তাঁর উদারতার উদাহরণ টেনে উপমা দেয় মানুষকে ভালোবাসার প্রকৃত আন্তরিক বদান্যতার।
উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক সাবেক ছাত্র লীগ নেতা ও মরহুম পারভেজ খানের ছোট ভাই দিলনেওয়াজ বলেন, বড় ভাই ছিলেন আমাদের আদর্শ। তাঁর হাত ধরেই যেমন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়েছি। তেমনি তাঁর কাছ থেকেই শিখেছি মানুষকে আপন করে তাদের পাশে দাঁড়ানোর ও সেবা করার মানসিকতা। তাঁকে হারিয়ে আজ আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। কিন্তু তাঁর দেখানো পথে চলে সাধারণ মানুষের ভালোবাসায় সিক্তও হয়েছি। যে কারণে তাঁর স্মৃতিবহ এদিনটিতে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করি অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে।
করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি। সৈয়দপুরবাসীর সহায়তায় খাদ্য, করোনা প্রতিরোধক সামগ্রী বিতরণ সহ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা মোতাবেক সচেতনতা সৃষ্টির প্রচারণা লিফলেট, মাইকিং করেছি। পুরো শহরকে জীবাণুমুক্ত রাখতে শহরের প্রবেশ পথে সেনেটাইজার ক্যাম্পস্থাপন ও প্রধান প্রধান সড়কগুলোতে জীবাণুনাশক ছিটানোর কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। এমনকি সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ও সরকারি দপ্তরগুলোর প্রধান ফটকে জীবাণুনাশক স্প্রে টানেল স্থাপন করেছি।
নিজস্ব উদ্যোগে এসব কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সহযোগিতা করেছে। এবারও করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর আগে থেকেই নানা কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছি। সব কিছুই সম্ভব হয়েছে আমার মরহুম বড় ভাইয়ের দেখানো মানব সেবার আলোকে। আল্লাহর দরবারে তাঁর মাগফিরাত কামনা করে আজীবন এভাবে তাঁর পথ অনুস্মরণ করে চলার তাওফিক প্রত্যাশা করি এবং এজন্য সকলের দোয়া ও আশীর্বাদ চাই।