ডানেডিনে ব্যাটিংয়ে ভরাডুবির পর ক্রাইস্টচার্চে ঘুরে দাড়িয়েছিল বাাংলাদেশ। হারলেও ব্যাটিংয়ে নিজেদের সক্ষমতা জানান দিয়েছিল তামিম বিগ্রেড। ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে সিরিজের তৃতীয় ম্যাচটি ছিল নিউজিল্যান্ডের জন্য হোযাইটওয়াশের মিশন। বাংলাদেশের জন্য লজ্জা এড়ানোর।
কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচে শুক্রবার অসহায় আত্মসমর্ণ করলো বাংলাদেশ। বাজে বোলিং আর ফিল্ডিংয়ের পর দেখা মিলল নখদন্তহীন ব্যাটিং। ব্যাটসম্যানরা যোগ দিলেন যাওয়া আসার মিছিলে। নিউজিল্যান্ড পেল ১৬৪ রানের বড় জয়। ফলাফল বাংলাদেশের কপালে জুটল হোয়াইটয়াশের লজ্জা (০-৩)।
টানা তিন ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড করে ৬ উইকেটে ৩১৮ রান। চলতি সিরিজে অভিষেক হওয়া ডেভন কনওয়ে ও ড্যারেল মিচেল করেন সেঞ্চুরি। জবাবে শুরু থেকে হাসফাস করা বাংলাদেশ অল আউট হয় ১৫৪ রানে, ওভার ৪২.৪।
জিততে হলে করতে হবে ৩১৯ রান। বাংলাদেশের জন্য পাহাড়সম টার্গেট। শুরু থেকে যেখানে রানের বন্যা বইয়ে দেয়া উচিত ছিল, সেখানে বাংলাদেশ যোগ দেয় উইকেট বিসর্জনের মিছিলে। ২৬ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যান তামিম, সৌম্য ও লিটন। তিন জনকেই বিদায় করেন ম্যাট হেনরি।
প্রথম ওভার মেডেন খেলার পর তৃতীয় ওভারে হেনরির বলে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড তামিম। ৯ বলে তার রান ১। বাংলাদেশের দলীয় রান তখন ১০। পরের ওভারে পুল করার চেষ্টায় ফাইন লেগে ধরা পড়েন সৌম্য। ৬ বলে তার রানও ১।
টেন্ট্র বোল্টকে ফ্লিক করে বাউন্ডারিতে রানের খাতা খোলা লিটন ছিলেন আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু তিনিও পারেননি ইনিংস বড় করতে। ফিরে যান বোল্টের দুর্দান্ত এক ক্যাচে। দলীয় রান তখন ২৬। ২১ বলে সমান ২১ রান করেন লিটন।
চতুর্থ উইকেট জুটিতে মিঠুন ও মুশফিককে যেখানে হাত খুলে মারতে হতো, দেখা মিলল উল্টো চিত্র। লক্ষ্য বড়, কিন্তু দুজনে উইকেটে থিতু হতে খেলতে লাগলেন টেস্ট। ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ব্যর্থ দুজন। কিন্তু কেউই পারছিলেন না গ্যাপ বের করতে। এক পর্যায়ে রান রেট নেমে আসে তিনের নিচে।
অনেকটা সময় উইকেটে থেকেও সুবিধা করতে না পারা মিঠুন ফিরে যান রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায়। কাইল জেমিসনের অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে পুল করে ধরা পড়েন ডিপ স্কয়ার লেগে। পঞ্চম উইকেটে ৬৯ বলে দুজনে যোগ করেন ২২ রান। আগের ম্যাচে যিনি খেলেছিলেন ক্যারিয়ার সেরা ৭৩ রানের ইনিংস। আজ সেই মিঠুনের রান মাত্র ৬, বল ৩৯টি।
দলীয় ৭৭ রানে পঞ্চম উইকেটের পতন। শর্ট বলে ফেরেন মুশফিকও। জিমি নিশামকে পুল করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে দেন সহজ ফিরতি ক্যাচ। ৪৪ বলে এক চারে মুশি করলেন ২১ রান। একই ওভারে বিদায় মিরাজ। নিশামের বাজে এক বলে ধরা পড়েন পয়েন্টে।
দলীয় ৮২ রানে নিশামের বলেই ফেরেন মাহেদী হাসান। ৮ বলে তিন রান করে তিনি ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে লাথামের হাতে। উইকেট যখন পড়ছেই শেষের দিকে হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাসকিনের সঙ্গে তার জুটিই দলকে পার করে দেয় একশ রান। ৪৩ বলে ২০ রানের জুটি এদের। এই জুটি ভাঙেন হেনরিই। ২৪ বলে ৯ রানে ফেরেন তাসকিন। হাকিয়েছেন দুটি চার।
বাংলাদেশের বড় জুটি নবম উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে পেসার রুবেল হোসেনের। এক প্রান্ত আগলে রেখে রানের চাকা সচল রাখেন মাহমুদউল্লাহ। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে মারতে থাকেন চার ছক্কা। এরই মধ্যে দেখা পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৩তম ফিফটি।
৫৯ বলে ৫২ রানের জুটি ভাঙেন নিশাম। ২৮ বলে চার রান করে ফেরেন রুবেল, ৪২.১ ওভারে। সেই ওভারের চতুর্থ বলেই শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন মোস্তাফিজুর রহমান। ৪২.৪ ওভারে বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৫৪ রানে।
৭৩ বলে ৭৬ রানে অপরাজিত থাকেন সাইলেন্ট কিলার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হাকান ৬টি চার ও চারটি ছক্কা। বাংলাদেশের পুরো ইনিংসে ছক্কা হাকানো একমাত্র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহই। বল হাতে নিউজিল্যান্ডের হয়ে হয়ে ৫ উইকেট নেন নিশাম। হেনরি পান চার উইকেটের দেখা। এক উইকেট পান জেমিসন।
এর আগে টস হেরে ফিল্ডিংয়ে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা কিন্তু ভালোই ছিল। ৫৭ রানের মধ্যে ফিরিয়ে দেন মার্টিন গাপটিল, হেনরি নিকোলস ও রস টেইলরকে। কিন্তু পরের বিবর্ণ বোলিং আর বাজে ফিল্ডিংয়ে হাত থেকে ছুটে যায় লাগাম। ডেভন কনওয়ে ও ড্যারিল মিচেলের সেঞ্চুরিতে বড় সংগ্রহ পায় নিউজিল্যান্ড।
১১০ বলে ১২৬ রানের চমৎকার ইনিংস খেলেন কনওয়ে। ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় তিনবার বেঁচে যাওয়া মিচেল ইনিংসের শেষ বলে পৌঁছান সেঞ্চুরিতে। ৯২ বলে করেন ১০০ রান। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ ১৫৯ রানের জুটি গড়েন এই দুই জনে। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ১০৭ রান তোলে স্বাগতিকরা। ম্যাচ সেরা ডেভন কনওয়ে।
সিরিজে প্রথমবার মাঠে নামা রুবেল হোসেন ৭০ রানে নেন ৩ উইকেট। একটি করে উইকেট নেন সৌম্য সরকার, তাসকিন আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান।
দুঃস্বপ্নের ওয়ানডে সিরিজ শেষ। এবার টি টোয়েন্টির পালা। আগামী ২৮ মার্চ রোববার হ্যামিল্টনে শুরু হবে তিন ম্যাচের টি টোয়েন্টি সিরিজ।