শেরপুরে পাঁচ নারীর সফলতার কথা

শেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ প্রতিকুল সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও নিজেদের অধিকার আদায় ও সুন্দর জীবন ধারণের জন্য অনবরত সংগ্রাম করে গেছেন জীবনভর। শত প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন তারা। শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া পাঁচ সফল নারীর৷ তাদের মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর শ্রেষ্ঠ জয়িতার সম্মানে ভূষিত করেছেন। ‘জয়িতা অন্বেষণে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় উপজেলা জয়িতা নির্বাচন কমিটি-২০১৯ তাদের নির্বাচিত করেন।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা ফ্লোরা ইয়াসমিন জানান, সমাজের সব প্রতিকূলতাকে দূরে ঠেলে যেসব নারী জীবনে সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন তাদের উৎসাহ জোগাতে জয়িতা সম্মানে ভূষিত করেছেন। শ্রেষ্ঠ জয়িতা ২০১৯ এ ভূষিত উপজেলার পাঁচ নারী হলেন অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী মহিমা আরেং, শিক্ষা ও চাকরি ক্ষেত্রে নারী উম্মে কুলসুম, সফল জননী নারী লবদিনী চিসিম, সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা নারী রহিমা খাতুন ও নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যমে জীবন শুরু করা নারী শাহনাজ পারভীন।
মহিমা আরেং জানান, হতদরিদ্র পরিবারের নারী ছিলেন তিনি। তার আর্থিক অবস্থা মোটেও স্বচ্ছল ছিল না। সংসারে নানা অভাব অনটন থাকায় জীবন কাটতো দুঃখ দুর্দশায়। বর্তমানে ঝিনাইগাতী মহিলা মার্কেটে দোকান নিয়ে কাপড় বিক্রির পাশাপাশি দর্জিও কাজ করেন। তিনি এখন স্বাবলম্বী নারী। তার দেখাদেখি উদ্বুদ্ধ হয়ে আরও অন্য নারীরা এ কাজ ও ব্যবসা শুরু করেছেন।
উম্মে কুলসুম জানান, সামাজিক অব্যস্থাপনায় জীবন সম্পর্কে বুঝার আগেই মাত্র ১৪ বছর ৫ মাস বয়সে তার পরিবার তাকে বিয়ে দেন। সাংসরিক কাজে বাধ্য করা হলেও তিনি থেমে না থেকে সকল বাঁধা বিপত্তি উপেক্ষা করে বিএ পাশ করেন। বর্তমানে তিনি উপজেলার একমাত্র নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক।
লবদিনী চিসিম জানান, আট ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। এসএসসি পাশের পরই বাবা-মার স্বপ্ন পূরণে বিয়ে করেন। স্বামী এনজিওতে চাকুরী করতেন। সেই আয় দিয়ে সংসার চলত না। পরে ধর্মপল্লীর আওতাধীন জুনিয়র হাইস্কুল শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। দীর্ঘদিন সন্তান না হওয়ায় দুই মেয়েকে দত্তক নেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষাদানের মাঝে একজন অর্ধ প্রতিবন্ধী ছেলের বাবা পড়াশোনার খরচ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তিনি সেই ছেলে পড়াশোনার খরচের ব্যয় গ্রহণ করেন। অনাথ হিসেবে যাদের লাল-পালন করেছেন ,তারা পড়াশোনা শেষ করে আজ তারা সবাই বিভিন্ন স্থানে চাকুরী করছেন। এছাড়া সেলাই করে ভাই বোনের লেখাপড়ার খরচ চালানো, গ্রামীণ প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক ও যুগোপযুগী শিক্ষা দান করা, স্থানীয় সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সফল নারী হিসেবে নেতৃত্ব দান করা, নিজ কর্মময় জীবনের মাধ্যমে এলাকার নারীদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন।
রহিমা খাতুন জানান, আর্থিক দিক দিয়ে অস্বচ্ছল ছিলেন। সংসারে সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে কখনো পিছু হটেননি তিনি। সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজে সম্পৃক্ত থেকে তিনি বাল্যবিয়ে বন্ধ, সালিশ, সঠিক পরামর্শ ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাউন্সিলিং ও সমাজ সেবামূলক কাজ করেছেন এখনও।
শাহনাজ পারভীন জানান, পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মনোবল হারাননি। ঘুরে দাঁড়িয়ে সমাজে নিজ যোগ্যতার প্রমাণ রাখেন। স্বামীর কাছ থেকে তালাকের পর একমাত্র কন্যা সন্তানরক বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেকে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title