নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তায় আনসার বাহিনীর বিশেষ ইউনিট আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা কিভাবে কাজ করবেন তা চূড়ান্ত করেছে সরকার। আজ-কালের মধ্যে চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে দূতাবাসগুলোকে অবহিত করা হবে। বুধবার (১৭ মে) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এর আগে তিনি আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হকের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশি কূটনীতিকরা চাইলে টাকার বিনিময়ে চৌকস আনসার গার্ডের মাধ্যমে সড়কে চলাচলে নিরাপত্তা নিতে পারেন।
এর আগে চার দেশের রাষ্ট্রদূতকে পুলিশ এসকর্ট দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “যখন দেশে জঙ্গির উত্থান হয়েছিল, অগ্নিসন্ত্রাসের একটা রাজত্ব হয়েছিল তখন চারটি দূতাবাসকে ‘রোড প্রটেকশন’ দিতাম। এটা লিখিতভাবে দেওয়া হয়নি। তারাও আমাদের অনুরোধ করেনি। আমরাই তাদের দিয়েছিলাম, যাতে তারা কোনো রকম অসুবিধায় না পড়ে। আমরা চারটি দূতাবাসের বাইরে কাউকে দিইনি।”
সেই সুরক্ষা হঠাৎ প্রত্যাহারের কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মনে করি, আগের মতো জঙ্গিবাদ, অগ্নিসন্ত্রাসের পরিস্থিতি এখন নেই। সে জন্য এই রোড প্রটেকশনটা উঠিয়ে নিয়েছি। এর পরও যদি কোনো রাষ্ট্রদূত মনে করেন যে তাঁদের প্রয়োজন হবে, তাহলে আমরা নতুন করে আনসার গার্ড রেজিমেন্ট তৈরি করেছি, তারাই সেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। এটা অন-পেমেন্ট (অর্থ দিয়ে) দিতে হবে। খরচটা দূতাবাসকে দিতে হবে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সেই ব্যবস্থা করব। এ রকমই সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
কোনো দূতাবাস এভাবে নিরাপত্তা নিতে আবেদন করেছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো মাত্র জানালাম, যার যার প্রয়োজন হবে জানাবে। সব দূতাবাসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশের নিরাপত্তা রয়েছে। যে চার রাষ্ট্রদূতের কথা বললাম, তাঁদের গানম্যানও রয়েছে। সব ধরনের প্রটেকশন রয়েছে। শুধু আমরা সড়কে যে নিরাপত্তা দিতাম, এটা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাঁরা যদি রোড প্রটেকশনটা চান, সেটার ব্যবস্থা আমরা করব।’
মন্ত্রীদের নিরাপত্তা কমানো হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কমানো হবে না। সবাইকে আনসার গার্ডের নিরাপত্তা দেওয়া হবে।
আনসার টিম প্রস্তুত : বিদেশি দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে আনসার বাহিনীর বিশেষায়িত ব্যাটালিয়ন এজিবিকে। মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, এজিবির সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। গতকাল আনসারের মহাপরিচালকের সঙ্গে বৈঠকে কূটনীতিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা।
এ বাহিনীতে বর্তমানে একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন, দুটি মহিলা আনসার ব্যাটালিয়নসহ ৪২টি আনসার ব্যাটালিয়ন রয়েছে জানিয়ে আনসার সূত্র বলছে, এর মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের সাত হাজার সদস্য এককভাবে ৬০টি ক্যাম্প ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬টি ক্যাম্পে দুর্গম এলাকায় ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’-এ কাজ করে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, আনসার বাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে আনসার একাডেমিতে। তাঁরা নিয়মিতভাবে বিদেশেও প্রশিক্ষণ নেন। এ বাহিনীর সদস্যদের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ), র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথ মহড়ায়ও অংশ নেন তাঁরা।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে বহুল আলোচিত হলি আর্টিজানে হামলার দুই মাস পর ৩০ আগস্ট অফিস আদেশ জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ওই আদেশ বাংলাদেশে অবস্থানরত সব বিদেশি দূতাবাসে পাঠানো হয়। আদেশে দূতাবাসগুলোর নিরাপত্তায় আনসার বাহিনীর সদস্যদের সম্পৃক্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হয়, প্রশিক্ষিত ও সশস্ত্র আনসার সদস্যদের প্রতি মাসে ২৫০ ডলার করে দিতে হবে দূতাবাসগুলোকে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করেন এজিবির সদস্যরা। তবে বিশ্বজুড়ে আর্থিক মন্দার কারণে কিছুদিন ধরে এই সেবা নিচ্ছে না ইইউ দূতাবাস। এর আগেই সংকটকালীন পরিস্থিতির মোকাবেলায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গঠন করা হয় এজিবি। এই ব্যাটালিয়নের সদস্যরা দেশে-বিদেশে কুইক রেসপন্স প্রশিক্ষণ (কিউআরটি), স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ (এসটিটি) ও স্পেশাল প্রটেকশন প্রশিক্ষণ, বিশেষ অস্ত্র ও ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ২০০ জন এজিবি সদস্যকে নিরাপত্তায় নিয়োজিত করতে আগ্রহ দেখায়। দূতাবাসের পাঁচ সদস্যের একটি দল আনসার সদর দপ্তরসহ প্রশিক্ষণ একাডেমি পরিদর্শন করে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের বিষয়টি জানায়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার বাইরেও তারা আশ্বস্ত করে নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা এজিবি সদস্যদের প্রয়োজনীয় যানবাহন সুবিধা, প্রশিক্ষণ এবং বাহিনীর কর্মকর্তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যদিও সেই প্রতিশ্রুতি আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
দূতাবাসের নিরাপত্তার দায়িত্বের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অপারেশনস) সৈয়দ ইফতেহার বলেন, ‘টানা ছয় বছর আনসার বাহিনীর সদস্যরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে সাফল্যের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা এখন সব ধরনের দায়িত্ব পালন করছি।’