বগুড়া প্রতিনিধি: দেশের অন্যান্য পৌরসভার মতো ২য় ধাপে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বগুড়া জেলার শেরপুর পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মেয়র পদে মনোনয়ন পেতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ এখন তুঙ্গে। তবে কে পাচ্ছেন নৌকার টিকিট- এ নিয়ে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন জনসমাগম স্থলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনার ঝড়। আগামী পৌর নির্বাচনে যোগ্য মেয়র হিসেবে নিজেকে জাহির করতে সম্ভব্য ৫জন প্রার্থী পোস্টার, ব্যানার ও বিলবোর্ড দিয়ে ছেয়ে ফেলেছেন পৌর এলাকার বিভিন্ন অলিগলি। নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক সম্ভব্য মেয়র পদ প্রত্যাশীরা আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রীয় হাই-কমান্ডের শীর্ষ নেতাদের কাছে চেষ্টা-তদবির ও লবিং-গ্রুপিং অব্যাহত রেখেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
পৌরসভার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে শেরপুর শহর আওয়ামীলীগের বিশেষ বর্ধিত সভার মাধ্যমে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি’র পুত্র সরোয়ার রহমান মিন্টু’র একক নাম শহর কমিটির রেজুলেশনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানোকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-বিভক্তে পরিণত হয়েছে উপজেলা আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। অপরদিকে শহর আওয়ামীলীগ এমন সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে নৌকার টিকেটসহ দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ সম্বলিত ৫জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একটি তালিকাসহ আবেদন করেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ। এদিকে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে অধিষ্ঠিত থেকেও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনে এবার নিজের ছেলেকে মেয়র বানানোর চেষ্টা, ১০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য শেরপুর উপজেলা পরিষদের উপ-নির্বাচনে স্ত্রী শিল্পী বেগমকে ভাইস-চেয়ারম্যান পদে দাঁড় করানো দায়ে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। এদিকে জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির উপজেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের অবমূল্যায়ন স্পষ্ট হওয়ায় ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ তার সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। তাছাড়া দলীয় পদ ও ক্ষমতার চেয়ার শুধুই একটি পরিবারের সকলে পাবে! তাহলে আমরা কাদের জন্য রাজনীতি করি? এমনটাই প্রশ্ন এখন আওয়ামীলীগের অধিকাংশ নেতাকর্মীদের চোখে-মুখে।
আসন্ন ১৬ জানুয়ারী শেরপুর পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতিকের প্রত্যাশী হয়ে পৌর নাগরিকদের সাথে সুসম্পর্ক ও কুশল বিনিময়সহ নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দিয়ে মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে প্রার্থীরা। এদের মধ্যে বর্তমান মেয়র ও শেরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুস সাত্তার, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব আম্বিয়া, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি আলহাজ্ব মজিবর রহমান মজনু’র পুত্র বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব সরোয়ার রহমান মিন্টু, শেরপুর পৌরসভার ৪বার নির্বাচিত কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববি ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক। এসব প্রার্থীদের মেয়র পদে দেখতে চাই মর্মে পক্ষের ও সমর্থিত নেতাকর্মীদের ছবি সম্বলিত ব্যানার, পিভিসি ও বিলবোর্ড শহরের বিভিন্ন অলি-গলিতে শোভা পাচ্ছে। ধর্মীয় উৎসব ও করোনাকালীন সময়ে অসহায় ও দরিদ্র পৌর নাগরিকদের মাঝে এসব প্রার্থীরা তাদের নিজস্ব তহবিল থেকে সাধ্যমত সাযাহ্যসহ পৌরসভার রাস্তা-ঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। কে হবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের দলীয় মেয়র প্রার্থী, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই পৌর নাগরিক ও সচেতনমহলে।
এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ তাদের দলীয় মনোনয়ন দিতে কমপক্ষে ৩জনের নামের তালিকা পাঠাতে স্থানীয় আওয়ামীলীগকে চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপ্রেক্ষিতে শেরপুর শহর আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে স্থানীয় দলীয় মনোনয়ন সিলেকশান পেতে আবেদন জমা নেয়া হয় ৫জন সম্ভব্য মেয়র ও প্রায় ৩২জন কাউন্সিলর প্রার্থীদের কাছ থেকে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু’র পুত্র সরোয়ার রহমান মিন্টুকে দলীয় মনোনয়ন দিতে একটি চক্র গত ৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তড়িঘড়ি করে বিশেষ বর্ধিত সভা ও রেজুলেশন পূর্বক সিদ্ধান্ত দেয় শহর আওয়ামীলীগ। এ সভায় জেলার শীর্ষ কয়েকজন নেতাদের উপস্থিতি থাকলেও শুধু সভাপতি পুত্রের নাম ব্যতীত অপর দলীয় ৪ জন মেয়র পদপ্রার্থীর নাম কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়নি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতাকর্মী জানিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুবলীগ সভাপতিসহ উপজেলা, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। এর ফলশ্রুতিতে আসন্ন পৌর নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের লিখিত আবেদনে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে ৫জনের তালিকায় স্থানীয় এমপি’র সুপারিশকৃত আবেদন কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করেন।
এ ব্যাপারে শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ¦ মকবুল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রেজাউল করিম মজনু বলেন, পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটির নেতাকর্মীদের সমর্থন নিয়েই দলীয় মনোনয়ন পেতে একক প্রার্থীর নাম জেলা আওয়ামী লীগের মাধ্যমে কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার বলেন, জন্মগতভাবেই আমরা আওয়ামীলীগ করি, ৪বার পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছি। এবার আমি মেয়র পদে নির্বাচন করার সকল প্রস্তুতি নিয়েছি, নৌকা প্রতিক পেতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নাম প্রস্তাব পাঠানোর দাবী ছিল, কিন্তু জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির ছেলেকে মেয়র প্রার্থী বানাতে একপেশী সিদ্ধান্ত নেয় শহর আওয়ামীলীগ। এ সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ হলে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগর সভাপতি আলহাজ¦ মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল করি, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে নই, দল যে কাউকে নৌকা প্রতিক দিলেই তার পক্ষেই কাজ করবো। তাছাড়া আমরা উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটি পৌরসভার নির্বাচনে সম্ভব্য মেয়র প্রার্থীদের নামের তালিকা দলীয় গঠনতন্ত্রের ২৮/৫ ধারা অনুসারে ৫ জনের নামের তালিকা কেন্দ্রে প্রেরণ করেছি। উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে কোন একক নাম পাঠানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া-৫ (শেরপুর-ধুনট) আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ¦ হাবিবর রহমান বলেন, শেরপুর পৌরসভার মেয়র প্রার্থীদের নামের তালিকা পাঠানোর ব্যাপারে শহর আওয়ামীলীগ আমার সঙ্গে কোনো পরামর্শ করেনি। তবে উপজেলা আওয়ামীলীগ কর্তৃক ৫ জনের নামে তালিকা সম্বলিত আবেদনে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে একটি সুপারিশ করেছি।