বগুড়ায় কোরবানীর জন্য প্রস্তুত ৩ লাখ ৭৩ হাজার পশু, বিক্রি ও দাম নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির গরু বিক্রি নিয়ে খামারিরা যেমন শঙ্কায় আছেন, তেমনি দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ক্রেতারাও। চলমান লকডাউনের কারণে এই শঙ্কা আর দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। জেলায় এখন ছোট বড় ৪২ হাজার পশুর খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারের গরু, ছাগল,ভেড়া, মহিষ লালন পালন করা হচ্ছে। তবে এবার হাটে দুম্বা বিক্রি হবে বলে জানা গেছে। তবে খামারীদের পালন করা এইসব গরু ছাগল, ভেড়া সঠিক দামে বিক্রি করতে পারবে কি না তা নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

এবার বগুড়া জেলায় ৩ লক্ষ ৭৩ হাজার ৫৫ পশু কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে গরু মহিষ রয়েছে ২লক্ষ ৪৯ হাজার ১৯৮। ছাগল, ভেড়া ১লক্ষ ২৩ হাজার ৮৬৭টি। গত বছর কোরবানী পশুর চাহিদা ছিল ৩ লাখ ২৬ হাজার । কিন্তু করোনর কারণে জেলায় ১৪ হাজার কোরবানীর পশু উদ্বৃত্ব ছিল। মহামারি করোনা ঢেউ মেকাবিলা করা নিয়ে জেলা প্রশাসন ও প্রাণি সম্পদ বিভাগ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে। বগুড়ায় অনলাইন পশুর হাট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও এবছর স্বাস্থ্য বিধি মেনেই জেলায় মোট ৮৬টি হাটে পশু বেচা-কেনার নানা কৌশল ঠিক করা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া জেলার সারিয়াকান্দি, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, বগুড়া সদর, কাহালু, শিবগঞ্জ, ধুনট, আদমদিঘী উপজেলার খামারীরা কোরবানীযোগ্য পশু নিয়ে হাটে বিক্রি করার প্রস্ততি নিয়েছে। জেলায় এখনো কোরবানীর হাট জমে না উঠলেও প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তারা বলছেন আগামী সপ্তাহ থেকে জেলায় পুরো দমে কোরবানীর হাট জমে উঠবে।
ঈদুল আজযার সময় ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু কোনবানী হাট ঠিকভাবে বসতে না পারায় মানুষ তাদের পশুর দামও বিক্রয় নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। অনেকে মনে করছেন পশুর দাম কমে গেলে অনেক পশু পালনকারী ও খামারীরা লোকসানে পড়বেন। গেল বছরও অনেক পশু পালনকারী ও খামারীরা লোকসান গুনেছেন। এ বছরও লোকসান হলে অনেকে পশু পালন ছেড়ে দেবেন। তাই এখনও যে সময় আছে সেই সময়ের মধ্যে পশুর হাটগুলো লাগানোর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করলে অন্তত পশুগুলো ন্যায্য দামে বিক্রি হবে।
এদিকে খামার থেকে গবাদিপশু হাটে নেয়া ও বিক্রি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারিরা। তবে সেই শঙ্কা কিছুটা হলেও দূর করছে অনলাইনে কোরবানির হাট। খামারিদের চিন্তামুক্ত করতে ‘ফেসবুক’-এ পশু কেনাবেচার প্লাটফর্ম গড়ে তুলেছেন বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা গেছে, ফেসবুকে পশু বেচা-কেনা করতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। ‘পশুর হাট, আদমদীঘি, বগুড়া’ নামের একটি ফেসবুক গ্রæপ খুলে সেখানে উপজেলার খামারিদের যুক্ত করা হচ্ছে। সেই গ্রæপে তারা নিজেদের খামারের গবাদিপশুর ছবি দিয়ে বর্ণনা ও মালিকের ফোন নম্বর যুক্ত করে আপলোড করছেন ।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. কামরুন্নাহার আকতার বলেন, ‘উপজেলায় ২ হাজার ৪০০ খামারি রয়েছে। এবার তারা কোরবানির জন্য গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মিলে প্রায় ২৫ হাজার পশু প্রস্তুত করেছেন। এগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৮০ কোটি টাকা।’
জেলার সদর উপজেলায় এ বছর ২৫ হাজার৬১১টি গরু-মহিষ ও ১৩ হাজার ৮৮৩টি ছাগল ভেড়া কোরবানীর জন্য প্রস্তুত রয়েছে। জেলা বগুড়া ভান্ডার এগ্রো ফার্মে এবার কোরবানী যোগ্য ৯০ টি গরু আছে। এরই মধ্যে সেখানকার ৩০ টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
সরেজমিনে শেরপুর উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আমিনপুর উত্তরপাড়া গ্রামের রেজাউল করিম শেখের খামারে গেলে তিনি জানান, তিন বছর ধরে একটি ব্রাহমা জাতের গরু “বাংলার নবাব” লালন পালন করেছেন। ৬ দাঁতের গরুটির বর্তমান ওজন প্রায় ২৫ মন গরুটির ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
তবে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করিনি। প্রাকৃতিক উপায়ের মোটাতাজাকরণ করেছি। রেজাউলের ২৫ মন ওজনের গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা বলে দাবী করেন ওই খামারী।
অপরদিকে উপজেলার জয়লা গ্রামে শামীম হোসেনের খামারে গিয়ে দেখা যায়, তার খামারে ছোট বড় মিলে ৫০টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। পর্যায়ক্রমে সর্ব নি¤œ দাম ৮০ হাজার সর্বোচ্চ দাম ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দামের গরু রয়েছে।
খামারি শামীম হোসেন তিনি বলেন, এবার গরু বিক্রি করে লাভ নিয়ে শঙ্কায় আছি। সবচেয়ে ভয় হলো- পশু বিক্রি না করতে পারলে বছরজুড়ে খাটানো টাকার পুরোটাই লোকসান হয়ে যাবে। আবার পরের কোরবানি পর্যন্ত পশু লালন-পালন করতে অনেক টাকা খরচ হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে চোরাই পথে গরু এলে এবার বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে। এবার যাতে অন্য দেশ থেকে পশু না আসে, সেদিকে সংশ্লিষ্টদের খেয়াল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে শেরপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আমির হামজা বলেন, শেরপুর উপজেলায় মোট ৬ হাজার ৮৮২টি খামার রয়েছে। প্রতিটি খামার থেকেই কোরবানীর জন্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। এ বছর উপজেলায় গরু-মহিষ ২৪ হাজার ৮৫১টি, ছাগল-ভেড়া ১১ হাজার ৬১২টি কোরবানীযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে। তবে শেরপুরের কয়েকটি হাটে সামাজিক দুরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব পশু বিক্রির ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে এই কর্মকর্তা দাবী করেন।
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম তালুকদার জানান, গত বছরের মতো এবারও কোরবানির পশুর সংকট হবে না। বরং চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি কোরবানির পশুর চাহিদা দেশি গবাদি পশু দিয়ে পূরণ হয়। এবারও আমরা স্বাবলম্বী। সুতরাং কোরবানির পশু নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। তিনি জানান, দেশে পশু খামারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। গবাদিপশু সুস্থ রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিকভাবে পশু মোটাতাজাকরণে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খামারীরা সেইভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাছাড়া খামারীদের পশু বিক্রয় নিয়ে তেমন কোন চিন্তা নেই, জেলা প্রশাসনের সাথে দফায় দফায় মিটিং চলছে, খুব শীঘ্রই জেলায় ৮৬টি পশুহাট বসিয়ে এসব পশু বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হবে। তবে প্রস্তাবিত হাটগুলোতো স্বাস্থ্যবিধি মানতে প্রবেশ ও বাহির গেটে সুরক্ষা সাগ্রমীর ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। তাছাড়া রোগাক্রান্ত পশু’র ব্যবহারের প্রাণী সম্পদের নিয়োজিত ডাক্তারগণ সার্বক্ষনিক তদারকি করবেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title