নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বপ্নের পদ্মা সেতু আজ বৃহস্পতিবার দৃশ্যমান হয়েছে। দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের ২৯ জেলাকে যুক্ত করছে দেশের বৃহত্তম এই সেতু। পদ্মার এপার ওপার বেঁধে দিলো সেতুর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান।
আর এর মধ্য দিয়েই শেষ হলো বহুল আলোচিত পদ্মা সেতুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বড় কাজ। উন্মুক্ত হলো সারা দেশের সঙ্গে ২৯ জেলার সরাসরি সংযোগের পথ। স্প্যান বসানো শেষে এবার সড়ক এবং রেলের স্ল্যাব বসানো হবে। আর তখনই যানবাহন ও ট্রেন চলাচল করতে পারবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরে সেতুটি চালু করার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যানটি খুঁটির ওপর বসেছিল। বাকি ৪০টি স্প্যান বসাতে লাগলো তিন বছর দুই মাস। বন্যার অত্যধিক স্রোত আর করোনা পরিস্থিতির জন্য পদ্মা সেতুর কাজে কিছুটা গতি কমিয়ে দেয়। করোনার ক্ষতি কমাতে প্রকল্প এলাকা পুরোপুরি লকডাউন করা হয়। নদীর দুই পারে দুটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
করোনা ও বন্যা পরিস্থিতির ধকল কাটিয়ে ১১ অক্টোবর ৩২তম স্প্যান বসানোর পর অনুকূল আবহাওয়া পাওয়া যায়। এরপর কারিগরি কোনো জটিলতা না থাকায় বাকি স্প্যানগুলো বসানোর কাজ হয় টানা।
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। এরপর একে একে বসানো হয় ৪০টি স্প্যান। এতে দৃশ্যমান হয়েছে সেতুর পাঁচ হাজার ৮৫০ মিটার অংশ।
৪২টি পিলারে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যান বসিয়ে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হবে। সব কয়টি পিলার এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
সর্বশেষ পদ্মাসেতু প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিলো ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফায় আরও ১ হাজার ৪শ কোটি টাকা বাড়ানো হয়। ফলে পদ্মা সেতুর ব্যয় দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। ২০০৭ সালে একনেক ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পটি অনুমোদন করেছিল। পরে নকশা পরিবর্তন হয়ে দৈর্ঘ্য বেড়ে যাওয়ায় নির্মাণ ব্যয়ও বেড়ে যায়।
২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালে আবারো ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ালে মোট ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সবশেষ আরও ১৪০০ কোটি টাকা বাড়ে।
মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি)। নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড।
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ বহুমুখী সেতুর মূল আকৃতি হবে দোতলা। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হচ্ছে এ সেতুর কাঠামো। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর আগামী ২০২১ সালেই খুলে দেয়া হবে পদ্মা সেতু।