ঢাকা: স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে দুর্নীতি বিষয়ে জিরো ট্রলারেন্স নীতির কথা বলা হয়েছে। আমরা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি না, দুর্নীতিকে শতভাগ নির্মূল করতে পদক্ষেপ নিয়েছি। শুক্রবার (৩০ আগস্ট) ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডুরা) আয়োজিত ‘নাগরিক সেবা নিশ্চিতে স্থানীয় সরকারের করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় সরকারের সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা সবগুলো সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছি। প্রতিদিনি নতুন নতুন বিষয়ে সমন্বয়ের প্রয়োজনীতা দেখা দিচ্ছে। আমাদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য অনুযায়ী তারা পরস্পরের সঙ্গে কাজ করছে। আমি মনে করি না, কোথাও সমন্বয়হীনতা আছে। যেখানে সমস্যা আছে সেগুলো আমরা সমাধানের চেষ্টা করছি। যদি সমন্বয়হীনতা থাকে সেটিকে আমরা সমন্বয় করবো। ডেঙ্গু রোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটার বিষয়ে সফলতা-ব্যর্থতা বলা যাবে না। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। এখানে বলা যাবে না আমি সফল। আমরা তখন সফল বলতে পারবো যখন একজন মানুষও আক্রান্ত না হবে। আমি মানুষের সেবা করার অঙ্গীকার নিয়েই দায়িত্ব নিয়েছি। আমি শতভাগ চেষ্টা করার পরেও যদি সফলতা না আসে সেটাকে আমি কি করে দাবি করবো- আমি শতভাগ সফল হয়ে গেছি? ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) সভাপতি মশিউর রহমান খানের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন রুবেলের সঞ্চালনায় সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনসার আলী খান প্রমুখ। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এমপিদের ভূমিকা নেই- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, আমি আসলে বিষয়টি এমন মনে করছি না। এখনে নির্বাহী দায়িত্বটা হয়তো সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলরদের ওপর বার্তায়। আর সংসদ সদস্যরা সমন্বয় করেছে বলে আমি জানি। এখন কোথায় করে নাই সেটি আমি বলতে পারবো না। এমন অভিযোগ আমার কাছে আসেনি। মন্ত্রী বলেন, নগর অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এটা ঠিক হতে সময় লাগবে। সবকিছুর জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া সবকিছুর জন্য দরকার জনসচেতনতা। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, ঢাকা শহরে সুয়ারেজ সিস্টেম নিয়ে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। আগে রাজধানীতে যেমন জলাবদ্ধতা হতো, শান্তিনগর এলাকায় পানি জমে থাকতো। এখন নেই। আমাদের সবার সমন্বিত প্রচেষ্টায় জলাবদ্ধতা অনেকটা কমে এসেছে। তবে একেবারেই জলবদ্ধতা মুক্ত হয়নি। অনেক নাগরিক সমস্যা রয়ে গেছে এটা ঠিক, তবে পৃথিবীর এমন কোনও দেশ নেই যারা বলতে পারবে তাদের নাগরিক সমস্যার শতভাগ সমাধান করতে পেরেছে। অনুষ্ঠানে স্থপনি ইকবাল হাবিব বলেন, সরকার ব্যবস্থা একটি ধারাবাহিক ব্যবস্থা। নগর ভবনে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সভাপতিত্বে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, পূর্তমন্ত্রী, পানিসম্পদ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নিয়ে একটি সভা হয়। সেখানে ঢাকা শহরের জলজট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থায় সিটি করপোরেশনের নেতৃত্বে একটি মহাপরিকল্পনা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করারও সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের ঠেলাঠেলি বন্ধের সিদ্ধান্তও হয়েছিল। ওয়াসাকে দ্বিখণ্ডিত করে সেটি সিটি করপোরেশনে যুক্ত করা হবে। কিন্তু এসব বাস্তবায়ন হয়নি।’ এ সময় নাগরিক সমস্যা সমাধানে মন্ত্রীর কাছে ৬টি দাবি তুলে ধরেন তিনি। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাপনার উপর একটি কি নোট উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউড অব প্ল্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ড. আদিল মুহাম্মাদ খান। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেওয়া হয়। আমাদের স্থানীয় সরকারে যে বাজেট দেওয়া হয় তা দিয়ে নগরিকরা সর্বোত্তম সেবা পাচ্ছে কিনা সেদিকে আমাদের নজর দিতে হবে। বর্তমান সময়ে আমাদের জনস্বার্থের বিষয়টি বেশি আলোচিত। বিশেষ করে ডেঙ্গুর কারণে অনেক ক্ষতি হয়েছে। জনস্বাস্থ্য কতটুকু নিশ্চিত হচ্ছে সেটা দেখতে হবে। এসব মোকাবিলায় আমরা কীভাবে বছরব্যাপী কাজ করতে পারি সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আর নাগরিকদের দায়িত্ব হচ্ছে তারা কীভাবে স্থানীয় সরকারকে সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়টি নজরে দেওয়া। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ বলেন, সেবা প্রদান ও গ্রহণকারীদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে। অর্থ ও জনবলের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা যদি ভালো সেবা দিতে চাই, সেবার মান উন্নতি করতে চাই তাহলে এই জায়গাটিতে আরও বেশি উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এজন্য রিসোর্স থাকতে হবে এবং সেই রিসোর্সগুলোকে একেবারে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি বিষয়। সুতরং জনগণের কাছে তাদেরই জবাবদিহি করতে হবে। তাদের কাছে জনগণের প্রত্যাশাও বেশি করে।