দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: তৎকালীন সরকারের সাড়ে তিন কোটি টাকার বেশী ব্যয়ে বগুড়ার নন্দীগ্রাম সদর ২০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণ ও মূল্যবান সরঞ্জাম থাকলেও ১৪ বছর ধরে জনসাধারণের চিকিৎসাসেবায় কাজে আসছেনা। ২০০৬ সালে উদ্বোধনের সময় হাসপাতালের ওটিসহ মূল্যবান চিকিৎসা সরঞ্জামে ধুলাবালির স্তুপে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া ব্যবহার না করায় হাসপাতালের বিছানা ও আসবাবপত্রে ধুলাবালির আস্তরণ জমেছে। ঘুনপোঁকা ভবনের দরজা-জানালায় বাসা বাঁধায় খুলে পড়ছে দরজা জানালার কপাট। ঠিকমতো নজরদারি না থাকায় হাসপাতালটি মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হাসপাতালে নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ না হলেও শুধু নিয়োগপ্রাপ্ত একজন মেডিক্যাল অফিসার, ফার্মাসিষ্ট ও উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার দিয়ে হাসপাতালটির বহিঃবিভাগ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সুত্রে জানা গেছে, জেলার নন্দীগ্রাম ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান উপজেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার দুরে বিজরুল বাজারে অবস্থিত। উপজেলা সদরে কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স না থাকায় পৌর শহরসহ আশেপাশের বিপুল সংখ্যাক মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। নারীরা জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি এবং শিশুরা বিভিন্ন টিকাদান কর্মসূচির বাইরে থেকে যাচ্ছিল। এ কারণে উপজেলা সদরে একটি আধুনিক মানের হাসপাতাল নির্মানের দাবি তোলেন স্থানীয়রা। এর প্রেক্ষিতে ২০০১-২০০২ অর্থবছরে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে উপজেলা সদরে ২০ শয্যা বিশিষ্ট একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তত্ত¡াবধানে (নির্মাণ ও রক্ষাবেক্ষন ইউনিট-সিএমএমইউ) হাসপাতালটির অবকাঠামো নির্মাণ সহ আনুসাঙ্গিক খাতে ব্যায় হয় ৩ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান হাসপাতালটির ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন এবং নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০০৫ সালে ওই হাসপাতালের অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়। কিন্তু অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আটকে যায়। পরবর্তীতে জনবল নিয়োগ ছাড়াই ২০০৬ সালের ১৮ অক্টোবর হাসপাতালটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন সাংসদ ডা: জিয়াউল হক মোল্লা। এরপর দীর্ঘ ১৪ বছরেও জনবলের অভাবে হাসপাতালটি আর চালু হয়নি। ফলে হাসপাতালের বিশাল ক্যাম্পাস জুড়ে ঘাস ও বিভিন্ন গাছ-জঙ্গল গজিয়েছে। আবাসিক ভবনগুলো নষ্ঠ হতে চলেছে বলে এলাকাবাসীরা জানান।
সোমবার সরেজমিনে জেলার নন্দীগ্রাম ২০ শয্যা হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের প্রধান ফটক ও ষ্টোর রুম ছাড়া সব কক্ষে তালা ঝুলছে। হাসপাতালের একটি কক্ষে চলছে বর্হিঃ বিভাগের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবার সাময়িক কার্যক্রম।
ওই হাসপাতালে কর্মরত উপ-সহকারি কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার উম্মে হাসনা বানু জানান, ‘প্রতিদিন এখানে গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া বাড়তি সেবা দেওয়া যায় না।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তোফাজ্জল হোসেন মন্ডল বলেন, ‘জনবলের অভাবে ওই হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা যাচ্ছে না। জনবল চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। এখনো সরকারিভাবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন বলেন, ২০ শয্যার সদর হাসপাতালটি চালু করার বিষয়ে সংসদ অধিবেশনেও বলেছি। ইতোমধ্যেই একটি নিরিক্ষা কমিটি গঠন করে প্রতিবেদন তৈরি করছে। খুব শিঘ্রই সেই প্রতিবেদনের আলোকে তারা হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন।