উত্তরাঞ্চলে বাঙালী নদীর ২২৩ কি.মি. খনন প্রকল্পের কাজ শুরু হচ্ছে শীঘ্রই

দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: উত্তরের গাইবান্ধা থেকে বগুড়া- সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ২২৩ কিলোমিটার বাঙালী নদীর খনন ও তীর সংরক্ষণের কাজের অনুমোদন হয়েছে। এ কাজটি সম্পন্ন করতে সরকারের ব্যয় হবে ২৩শ কোটি টাকা। অপরদিকে বাঙালী নদীর অব্যাহত ভাঙন রোধে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার সোনাকানিয়ায় বাঁশের পাইলিং করে বালুর বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করা হচ্ছে।

জনশ্রæতি রয়েছে, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে কাটাখালি ও এলাই নদীর মিলনস্থল থেকেই ‘বাঙালি’ নদীর উৎপত্তি। এরপর সেটি উত্তর থেকে দক্ষিণে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর উপজেলার খানপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে মিলেছে। ফলে এ নদীটির নাম হয়েছে ‘করতোয়া’। এরপর ওই নদীটি সিরাজগঞ্জের নলকায় গিয়ে ‘ফুলজোড়’ নাম ধারণ করে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির দক্ষিণে হুরাসাগর নদীতে গিয়ে মিশেছে। তারপর সেই নদীর নাম হয়েছে ‘হুরাসাগর’- যেটি যমুনা নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থলে নদীটির গড় প্রশস্থতা ৯০ মিটার আর শেষ প্রান্তে সেই প্রশস্থতা বেড়ে হয়েছে ২০০ মিটার। এসব নদী বছরের পর বছর বালি আর পলি জমে নদীগুলোর তলদেশ ক্রমশ উঁচু হয়ে গেছে। আর কোন বাঁধ না থাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টির পানিতই নদীগুলো ভরে যায় এবং দু’কূল উপচানো পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এবং শত শত একর ফসলী জমির আবাদ নষ্ট করে। ফলে নদীগুলো বর্তমানে নাব্যতা সংকটে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে ‘বাঙালি’, ‘করতোয়া’, ‘ফুলজোড়’ এবং ‘হুরাসাগর’ নামে এই অঞ্চলের ৪টি নদীর নাব্যতা ফেরানোর মাধ্যমে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন রোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রেখে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য এক বছর আগে পাউবোর পক্ষ থেকে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রায় ৬ মাস যাচাই-বাছাই শেষে ‘বাঙালি-করতোয়া-ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ’ নামে ২ হাজার ৩৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার ওই প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পায়।

সেই নিরিখে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া জেলার ধুনট, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলার উপর দিয়ে গাইবান্ধা পর্যন্ত ২২৩ কিলোমিটার বাঙালী নদী খনন ও নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য সরকার চলতি বছরে ২৩শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে।

এর মধ্যে বগুড়ার ৩ উপজেলার ২৯ টি পয়েন্টে ২২টি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজটি সম্পন্ন হবে। বগুড়ার অংশে নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ করতে ব্যয় হবে ৮শ কোটি টাকা। বাঙালী, করতোয়া ও ফুলঝোড় নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ প্রকল্প নামের এই প্রকল্পটি অনুমোদনের পর টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঠিকাদার নিযুক্ত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

দীর্ঘদিন যাবত বাঙালী নদীর অব্যাহত ভাঙনে শতশত একর আবাদী জমি, গাছপালা ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফলে ওই নদী শাসন ও তীর সংরক্ষণের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকার এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে ওই প্রকল্পের কাজ একযোগে শুরু হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন কার্য সহকারী দেলোয়ার হোসেন জানান, সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া হয়ে গাইবান্ধা পর্যন্ত ২২৩ কিলোমিটার নদী খনন ও তীর সংরক্ষণ করতে সরকারের ব্যয় হবে ২৩শ’ কোটি টাকা। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে কৃষকদের জন্য নদী থেকে পানি উত্তোলন করে কৃষি ফসল ফলানো সহজ হবে। বগুড়ার ধুনট থেকে শুরু করে সোনাতলা পর্যন্ত ২৯টি পয়েন্ট ২২টি প্যাকেজের মাধ্যমে কাজ সম্পূর্ণ হবে। আর এতে সরকারের ব্যয় হবে ৮’শ কোটি টাকা বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।
খনন প্রকল্প নিয়ে সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্য সহকারী ফারুকুল ইসলাম জানান, সোনাতলার নামাজখালী, সাতবেকী, রংরারপাড়া, হলিদাবগা, নিশ্চিন্তপুর ও সোনাকানিয়ায় নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ হবে। এ ছাড়াও বাঙালী নদীর অব্যাহত ভাঙন রোধে সোনাকানিয়ায় বাঁশের পাইলিং করে বালুর বস্তা ফেলানো হচ্ছে, এতে করে ভাঙন রোধ হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title