বরগুনা প্রতিনিধিঃ বরগুনার আমতলীতে ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাঁধ ভেঙ্গে দুটি গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।এলাকাবাসীর দাবি উচু বাধের নির্মাণ।“পানিতে মোগো সব শেষ হইয়া গ্যাছে, মোগো জমির ফসল ব্যাবাক পানতে ডুইব্বা রইছে, ভাইস্যা গেছে মোগো ঘের পুহিরের মাছ” আক্ষেপ করে এ কথাগুলো বলতে ছিলেন সদর ইউনিয়নের উত্তর টিয়াখালী আদর্শ প্রামের (গুচ্ছগ্রাম) সভাপতি আব্দুল খালেক প্যাদা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ওই দুটি গ্রামের মাঝখান দিয়ে আড়পাঙ্গাশিয়া নদী (হুমার খাল) বয়ে গেছে। নদীর দক্ষিন পার্শ্বে তারিকাকাটা গ্রাম ও উত্তর পার্শ্বে টিয়াখালী আদর্শ গ্রাম (গুচ্ছগ্রাম)। এ গ্রাম দুটিতে দের শতাধিক পরিবারের প্রায় সাতশত লোকের বসবাস। নদীর দুই পারে নেই কোন উচু ভেরীবাঁধ। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দূযোর্গে এখানে বসবাসরতদের ফসলী জমি ও বাড়ীঘরে জোয়ারের পানি ঢুকে নিমজ্জিত হয়। গত ১৯ বছর পূর্বে এখানে বসবাসরতদের জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় আমতলী ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১০ ফুট প্রসস্থ ও ৪ ফুট উচ্চতার একটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যা ২০১২ সালে আমতলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা তার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে একবার সংস্কার করেছিলেন। এরপর থেকে অদ্যবদি এ বাঁধটি সংস্কার না করায় বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান নরবরে ও ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। গত ১৯ মে রাতে সুপার সাইক্লোন ‘আম্ফানের’ প্রভাবে জোয়ারের পানির চাপে এ বাঁধের তিনটি স্থান ভেঙ্গে গ্রাম দুটিতে পানি ঢুকে পড়ে। এতে শতাধিক পরিবারের বসতবাড়ী পানিতে নিমজ্জিত হয়ে ৫০টির অধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। প্রায় ২০০ একর জমির মুগ ডালসহ কাঁচা মরিচ, ভেনডি ও বিভিন্ন প্রকারের সাকসবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। গত চার দিন ধরে গ্রাম দুটির মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। স্থায়ীভাবে জলোচ্ছাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এখানে বসবাসরতরা দীর্ঘদিন ধরে একটি উচু বাঁধ নিমার্ণের দাবী জানিয়ে আসছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, সুপার সাইক্লোন আম্ফানের প্রভাবে ১৯ মে (মঙ্গলবার) রাতে বরগুনায় সাড়ে ১১ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাস হয়েছে। এতে আমতলী উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানের বাঁধ ভেঙ্গে নদীর পানিতে ফসলি জমিসহ গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে এখনো পানির মধ্যে নিমজ্জিত রয়েছে বরগুনার আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর টিয়াখালী আদর্শ গ্রাম (গুচ্ছগ্রাম) ও আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের তারিকাটা গ্রামের দের শতাধিক পরিবার। গত চার দিন ধরে তারা পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে ।
স্থাণীয় বাসিন্ধা জাহাঙ্গীর প্যাদা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে জোয়ারের পানির চাপে বাঁধ ভেঙ্গে আমাদের দুটি গ্রামের দের শতাধিক পরিবার পানি বন্দি হয়ে পড়েছি। আমার ২০ একর জমির মুগডাল বর্তমানে পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। আজ আমরা চার দিন ধরে পানি বন্দি অবস্থায় আছি।
স্থাণীয় জামাল মোল্লা জানান, উচু ভেরীবাঁধ না থাকায় প্রতি বছর ঝড় জলোচ্ছাসে আমাদের এ গ্রাম দুটিতে জোয়ারের পানি ঢুকে বসতবাড়ী জমিজমা, মাছের ঘের পুকুর প্লাবিত হয়। এখানকার বাসিন্ধাদের স্থায়ী জলাবদ্ধতা দূর করা ও জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার হাত থেকে আমাদের রক্ষার জন্য এখানে একটি উচু ভেরীবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবী জানাই।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউপি সদস্য আবুল কালাম বলেন, তারিকাটা গ্রামের ফসলী জমি ও বসতবাড়ী জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় জন্য এখানে একটি ভেরীবাঁধ নির্মাণ করা প্রয়োজন।
আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ হুমায়ূন কবির বলেন, প্রতি বছর প্রাকৃতিক দূযোর্গে গ্রাম দুটি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। গ্রাম দুটোতে বসবাসরতদের পানিবন্দির হাত থেকে রক্ষায় একটি উচু ভেরীবাঁধ নির্মাণ করা জরুরী।
আমতলী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ মোতাহার উদ্দিন মৃধা বলেন, এখানে একটি উচু ভেরীবাঁধ নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের সাধারণ সভায় রেজিলেশন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। দুঃখের বিষয় অদ্যবদি এখানে কোন ভেরীবাঁধ নির্মাণ করা হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, এ দুটি গ্রামের মানুষদের পানিবন্দির হাত থেকে রক্ষা করতে জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।