বরগুনা প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসে বিশ্ব যখন স্তব্ধ ঠিক সেই মুহুর্তে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান বরগুনাসহ উপকূলীয় দিকে ধেয়ে আসছে।ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আরো শক্তিশালী হয়ে সুপার সাইক্লোন রুপ নিয়েছে।একদিকে করোনা ভাইরাসে কর্মজীবী মানুষের অনেক কষ্টে জীবন-যাপন করছে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আগমনী বার্তায় আতঙ্কিত রয়েছে।
জানা গেছে,দক্ষিণ-পশ্চিম অবস্থানকৃত বঙ্গোপসাগরের ঘূণিঝড় আম্ফান আরো প্রবল আকার ধারন করেছে।তাই ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে এবং বরগুনা এর আওতায় থাকবে।ঘূর্ণিঝড়টি পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে এবং আরো প্রবল আকার ধারন করে উত্তর
দিকে অগ্রসর হতে পারে।১৯ মে মধ্যরাত থেকে ২০ মে বিকেল অথবা সন্ধ্যার মধ্যে বাংলাদেশ উপকুল অতিক্রম করতে পারে।ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২১০ কিলোমিটার,দমকা হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমের সময় ওইসব এলাকায় অতি ভারী বৃষ্টিসহ ঘণ্টায় ১৪০ থেকে ১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। তাই উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে অতি দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।ঘূর্ণিঝড় আম্ফান ঘণীভূত হওয়ায় মানুষের মাঝে সর্তকতা বাড়াতে একদল সিপিবি কর্মরী নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বরগুনা কার্যালয় সূত্রের তথ্যমতে জেলার ২২টি পোল্ডারে ৯৫০ কিলোমিটার বেরিবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিশেষ করে সদরের নলটোনা, এম বালিয়াতলি, বদরখালি ও বুড়িরচর ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকা, আতমলী তালতলি বামনা ও বেতাগী উপজেলার নদী তীরবর্তি বাঁধ সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা সবসময়ই আতংকে থাকেন।
সিপিবি বরগুনা সদর উপজেলার টিম লিডার জাকির হোসেন মিরাজ বলেন, জেলার ১২লাখ মানুষের প্রায় এক তৃতীয়াংশের বসবাস নদী তীরবর্তি গ্রামে। উপকূলীয় বাসিন্দাদের তূলনায় আশ্রয়কেন্দ্রর সংখ্যা অনেক কম। আমরা বছরের পর বছর ধরে বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনলেও এখনো পর্যাপ্ত আশ্রয়কেন্দ্র নির্মান করা সম্ভব হয় নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোসা.রুনু বেগম জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন এবং শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আসাদুজ্জামান বলেন,ঘূর্নিঝড় আম্ফান বিষয় রবিবার বিকালে উপজেলা পরিষদের হল রুমে এক জরুরি সভা করা হয়েছে।ইতিমধ্যে ঘূর্নিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।উপকূলীয় এলাকা গুলোতে ব্যাপক আকারে মানুষের মাঝে সর্তকতা অবলম্বন বাড়াতে মাইকিং করা হচ্ছে এবং সিপিবি কর্মরী তারা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।ইতিমধ্যে আমরা ১১৮টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।যেকোন সময় মানুষ এসে আশ্রয় নিতে পারবে।তিনি আরো জানান,ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তালতলীবসীকে ২৪ঘন্টা সেবা প্রদানের জন্য একটা কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে…যার নাম্বার হল..(০৪৪৫৬৫৬০০৫,০১৮৩৭৬৯২২৭০,০১৯০২৮৮২০৭৯) এছাড়াও বিনামূল্যে ৯৯৯, ৩৩৩, ১২৯ এই নাম্বারে যে কোন প্রয়োজনে কল করতে পারবেন।
বরগুনা জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. লুৎফর রহমান বলেন, বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ২৫ লাখ টাকা ও ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা প্রতিটি উপজেলায় বণ্টন করা হবে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কাওছার হোসেন বলেন, বাঁধও মেরামত করা জরুরি আমরা কিছু কিছু এলাকার বাঁধ নির্মাণ ও সংষ্কার করছি।
বরগুনা জেলা প্রশাসক জনাব মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন,ঘূণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় বিকেলে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়েছে।জেলায় পাঁচশতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হলেও স্বাস্থবিধি বজায় রাখার বিষয়টি এখন বড় রকমের চ্যালেঞ্জ। যদিও বরগুনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্রে গ্রাম পুলিশ ও সেচ্ছাসেবী সংগঠনের টিম সার্বক্ষণিক সামাজিক ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত থাকবেন।