বাগমারাপ্রতিনিধিঃ বিশ্বময় করোনা আতংকে আতংকিত। আতঙ্কের মহামারির থাবায় বেড়েই চলেছে মৃত্যুর মিছিল। মহামারির কড়াল থাবা থেকে রেহাই পায়নি বাগমারার মানুষ। বাগমারাবাসীর এমন দুর্দিনেও পাশে নেই উপজেলা চেয়ারম্যান অনীল কুমার সরকার।
অনীল কুমারের নিজ দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও আজ বাগমারার অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মাঝে এখন একটিই প্রশ্ন, মানুষের চরম দুর্দিনে উপজেলা চেয়ারম্যান কোথায়?
বাগমারার গণমানুষের নেতা সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক দিনরাত এলাকায় অবস্থান করে ত্রাণ নিয়ে অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খুলেছেন করোনা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। এমপি’র অনুকরণ ও অনুসরণে দুই পৌর মেয়র, বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান এবং অনেক সংগঠনের নেতাকর্মীরাও সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগে যে যার মত পারছে, ত্রাণ নিয়ে ছুটে চলেছেন অহসায় মানুষের পাশে। এছাড়া বাগমারাবাসীর দ্বারে দ্বারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাধ্যমত ত্রাণ নিয়ে ছুটে চলেছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টু। অথচ এই বিপদের মূহুর্তে কোথাও দেখা মিলছে না উপজেলা চেয়ারম্যান অনীল কুমার সরকারের।
উপজেলা পরিষদ ও দলীয় নেতা কর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় মাস হতে চলল বাংলাদেশের অন্যান্য উপজেলার মত বাগমারাকেও লকডাউনে রেখেছে প্রশাসন। এরই মধ্যে গত ১১ এপ্রিল উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের যাত্রগাছি গ্রামে নারায়ণগঞ্জ ফেরত এক ব্যক্তির শরীরে করোনা শনাক্ত হলে প্রশাসন আরো হার্ডলাইনে চলে যায়। শক্ত হাতে চালানো হয় লকডাউন কার্যক্রম। হাট-বাজারগুলোতে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে এমপি এনামুল হক উদ্যোগ নিয়ে বাগমারা মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্সকে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র করে রোগির বাড়ি বাড়ি চিকিৎসা দেওয়া শুরু করেন। এমপি এনামুল হকের এসব কার্যক্রমে আপাতত স্বস্তি ফিরে আসে বাগমারাবাসীর মনে।
দলীয় সূত্র মতে, এবার ত্রাণ নিয়ে চলে হাহাকার। সাধারণ নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো পড়েছে চরম দুর্বিপাকে। চা স্টল মালিক, ক্ষুদ্র দোকানী, সেলুন মালিক, ছ-মিল শ্রমিক, ভাটা ও বয়লার শ্রমিক সহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমজীবী মানুষের মাঝে শুরু হয় হাহাকার। তাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এসব দিশেহারা লোকজনের পাশে ছুটে আসেন ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক। করোনা সংকটের শুরু থেকেই তিনি তার সাধ্যমত চাল ও অর্থ সাহায্য দিয়ে যাচ্ছেন। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় এই সাহায্য ছিল অপ্রতুল।
ত্রাণ প্রত্যাশি সাধারণ লোকজনের মনে একই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে দেখা দিচ্ছে, তাদের আরেক নেতা অনীল কুমার সরকারের কথা। কেন তিনি এই দুর্দিনে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না।
অনীল কুমার সরকার দলীয় পদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছাড়াও জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হলেও এই সংগঠন থেকেও কোন ত্রাণ কার্যক্রম না চালানোয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ ও হতাশা। ভবানীগঞ্জ হিন্দুপাড়ার একাধিক প্রবীণ ও নবীন ব্যক্তি বলেণ, অনীল সরকার আমাদেরকে ধোকা দিয়েছেন। ভোটের সময় আমরা তার জন্য জানপ্রাণ দিয়ে খেটেছি। দশ পারসেন্ট ভোট আনাও যে কী কষ্ট ছিল, তা আমরাই জানি। অথচ আজ তিনি লঙ্কায় গিয়ে রাবন বনে গেছেন। আমাদের দিকে আর ফিরে তাকাচ্ছেন না।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ভবানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা বীরেনন্দ্র নাথ সরকার বলেন, অনীল কুমার সরকার একজন মস্ত অভিনেতা। ২০০১ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী জিন্নাতুন নেসার পরাজয় হবে ভেবে চিকিৎসার নামে ভারতে গিয়েছিলেন। তিনি বড় সুবিধাবাদী ও সুযোগ সন্ধানী নেতা। আজ গোটা দেশের মত বাগমারাবাসীর চরম বিপদের দিনে তাদের পাশে না থাকাটা দুঃখজনক। তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের কর্মী হিসাবে ঘরে বসে নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে সাধ্যমত মানুষকে ত্রাণ দেওয়ার চেষ্টা করছি।
প্রায় একই অভিমত ব্যক্ত করে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাকিরুল ইসলাম সান্টু বলেন, বাগমারাবাসীর চরম দুর্দিনে ত্রাণ দেওয়ার ভয়ে অসুস্থতার কথা বলে তিনি দূরে সরে রয়েছেন।
আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, অনীল কুমার সরকারের অবস্থা সেই রাখাল বালকের মত। বার বার বাঘ বাঘ বলে চিৎকার করে লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে যখন সত্যি বাঘ এসেছে, তখন লোকজন এগিয়ে যায়নি। অনীল সরকারও তাই। বার বার অসুখ অসুখ বলে এবার হয়ত তিনি সত্যিই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে মানুষ তা আর বিশ্বাসে নিতে চাইছে না।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি মতিউর রহমান টুকু জানান, শুনেছি অনীল সরকার অসুস্থ। আরো শুনেছি তিনি এক মেট্রিক টন চাল এমপি’র ত্রাণ ভান্ডারে জমা দিয়েছেন। তবে সেই চাল কোথাকার, তা আমার জানা নেই।
উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, অনীল কুমার সরকার অসুস্থ। তার পক্ষে আমরাই মাঠে কাজ করছি। তিনি তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে এক মেট্রিক টন চাল আমাদের দিয়েছেন। আমরা তা বন্টন করেছি।
উপজেলা চেয়ারম্যানের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরিফ আহম্মেদ বনে, উপজেলা চেয়ারম্যান অসুস্থ। তার সাথে আমার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে। তার সর্দি ও কাশি হয়েছে। তবে জ্বর তেমন নেই।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান অনীল কুমার সরকার বলেন, আমার মাসিক সম্মানীর টাকা দিয়ে গরীব মানুষের জন্য এক মেট্রিক টন চাল কিনে দিয়েছি। আমি একটু অসুস্থ আছি। ডাক্তারের পরমর্শে ওষুধ সেবন করছি। আমার সুস্থতার জন্য প্রিয় উপজেলাবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করছি।