করোনা মোকাবেলায় জনপ্রতিনিধিরা জনগনের সেবা দিয়ে গেলেও, ঘরে থাকছে না জনগন

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ করোনা ভাইরাস বর্তমান বিশ্বে মহা আতঙ্কের নাম। এই মহামারী প্রকোপ থেকে বাদ পরেনি কোন দেশ। তারই ধারাবাহিকতায় এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। গত ৮ মার্চ যখন দেশে প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। যার মধ্যে দুুইজনই নারায়নগঞ্জের ছিল। তবে প্রথম রোগী শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই নড়েচড়ে বসে নারায়নগঞ্জ প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে শুরু হয় ব্যাপক কর্মযজ্ঞ। প্রত্যেক সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং জনপ্রতিনিধি ছুটে বেড়ান জনগনের দ্বারে দ্বারে এবং চেষ্টা করেন জনগনের মাঝে রোগটি সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টি করার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রশাসন, সরকারি-বেসরকারি ও জনপ্রতিনিধিরা শত চেষ্টার পরও জনগনকে ঘরে রাখতে পারে নি। ফলে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যুর সংখ্যা নারায়নগঞ্জকে ঘোষনা করা হয় রেডজোন হিসেবে ঘোষনা করে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) । স্বাস্থ বিভাগের তথ্যমতে, একমাসের ব্যবধানে রোগীর সংখ্যা ২ জন থেকে বেড়ে দাড়ায় ৭৫ জনে এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১০ জন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) রাতে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মাধ্যমে নারায়নগঞ্জ জেলাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরুদ্ধ ঘোষনা করে। যা ৮ এপ্রিল (বুধবার) থেকে কার্যকর হয়ে অব্যাহত রয়েছে। অবরুদ্ধ ঘোষনার পর পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও এখন বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় অলিগলিতে আড্ডা দিতে দেখা যাচ্ছে অতিউৎসাহিদের। আবার অনেকে ত্রানের দাবি করছেন বিক্ষোভ। প্রশাসনের শত চেষ্টার পরও কোন অবস্থাতেই মানানো যাচ্ছে না সরকারি নির্দেশনা।

এর আগে, করোনা শনাক্ত হওয়ার পরপরই জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় করা হয় বিশেষ কমিটি। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে অন্যান্য কর্মকর্তারা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় প্রচার প্রচারনা করেন এবং জনগনকে শারীরিক দুরত্ব বজায় রাখতে, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং অযথা জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়ার আহ্বান জানান।

অন্যদিকে, নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এর পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ব্যাপক কর্মসূচী। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা চালানো হয় ব্যাপক প্রচার, প্রচারনা ও সচেতনতা মূলক অভিযান। নগরকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও জীবানুমুক্ত রাখতে প্রতিটি ওয়ার্ডে ক্লোরিন মিশ্রিত পানি ছিটানো হচ্ছে এবং প্রতিদিন চলছে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন অভিযান।
এরমধ্যে অনেক জনপ্রতিনিধিরা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে মাস্ক, সাবান ও স্যানেটাইজার বিতরন করেন এবং জনগনে এসব সামগ্রী ব্যবহারে উদ্ভোধ করেন।

যাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে নাসিক ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর খন্দকার মাকসুদুল আলম এর নাম। যিনি যখন সাবান ও স্যানেটাইজারের চাহিদা বেড়ে যায় বাজারে দেখা দেয় এসব সামগ্রীর স্বল্পতা। এমন সময় তিনি নিজ উদ্যোগে একটি সংস্থার কাছে থেকে ফর্মুলা সংগ্রহ করে স্যানেটাইজার বানান এবং বিনামূল্যে ওয়ার্ডবাসী ও জনগনের মাঝে বিতরন করেন। এই মহৎ উদ্যোগ গ্রহন করার ব্যাপক সর্বমহলে ব্যাপক প্রসংশিতও হন তিনি।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৬-১৭-১৮ নং ওয়ার্ড এর সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা হাসান, ৭-৮-৯ নং ওয়ার্ড এর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা এবং ১০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইফতেখার আলম খোকনসহ অন্য জনপ্রতিনিধিগণ করোনা আতংক উপেক্ষা করেই ঘরে ঘরে গিয়ে জনগনকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের সাধ্য অনুযায়ী অসহাদের কাছে পৌছে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় সামগ্রী। সেইসাথে সকলকে বারবার অনুরোধ করেছেন ঘরে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা পালন করার।

দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় সরকার সাধারন ছুটি ঘোষনা করার নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তরা দিন কাটাচ্ছেন দুঃশ্চিতায়। তাদের কথা চিন্তা করে সরকার, জনপ্রতিনিধি ও বিত্তবানরা ঘরে ঘরে খাদ্য জনগনেরর ঘরে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া বার আশ্বাস দেওয়ার পরও জনগনকে ঘরে রাখতে পারছে না। নানা অজুহাতে তারা বেরিয়ে আসছে বাইরে। এর ফলে করোনা ভাইরাসের সংক্রমন ছাড়ানোর ঝুঁকি বেড়েই চলছে।

এমতাবস্থায় প্রশাসনের প্রতি জনগনকে ঘরে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন জনপ্রতিনিধি ও নারায়নগঞ্জের সচেতন মহল। সেইসাথে অতিউৎসাহি জনগনকে ঘরে থেকে সরকারি নির্দেশনা পালন করার আহ্বানও জানান সচেতন নারায়নগঞ্জবাসী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title