নিজস্ব প্রতিবেদক: লেখক, প্রকাশক আর পাঠকের অপেক্ষা ঘুচিয়ে ভাষার মাসের প্রথম দিনে পর্দা উঠল অমর একুশে বইমেলার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাঙালির ‘প্রাণের এ মেলা’র ৪০তম আসরের উদ্বোধন করেন।
গতবারের মত এবারও মেলার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
প্রতিবছর প্রকাশকরা যেমন বইমেলার দিকে চেয়ে থাকেন, তেমনি পাঠকদেরও আগ্রহের কেন্দ্রে থাকে একুশের মাসব্যাপী বইমেলা। আর মেলাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন বই প্রকাশের হিড়িক পড়ে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকাশকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু কাগজের প্রকাশ করলে হবে না, ডিজিটালের প্রকাশক হতে হবে। ডিজিটাল প্রকাশক হলে একটা শুধু দেশে নয় বিদেশও পৌছাতে পারবো। মন মানসিকতা পরিবর্তন করে আধুনিক প্রযুক্তিটাও রপ্ত করতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারলে আমার এগিয়ে যাব।”
এ অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারও বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
পুরস্কার প্রাপ্তরা হলেন- কবিতায় শামীম আজাদ, কথাসাহিত্যে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী, প্রবন্ধ/গবেষণায় জুলফিকার মতিন, অনুবাদে সালেহা চৌধুরী, নাটক ও নাট্য সাহিত্যে (যাত্রা/পালা নাটক/সাহিত্যনির্ভর আর্টফিল্ম বা নান্দনিক চলচ্চিত্র) মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক, শিশুসাহিত্যে তপংকর চক্রবর্তী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় আফরোজা পারভীন ও আসাদুজ্জামান আসাদ, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গবেষণায় সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল ও মজিবুর রহমান, বিজ্ঞান/কল্পবিজ্ঞান/পরিবেশ বিজ্ঞানে ইনাম আল হক, আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা/ভ্রমণকাহিনি/ মুক্তগদ্যে ইসহাক খান ও ফোকলোরে তপন বাগচী ও সুমনকুমার দাশ।
বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিকাল ৩টার দিকে মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে উদ্বেধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার পরিচালনায় পরিবেশন করা হয় অমর একুশের গান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “এখন জেলায় জেলায় বই মেলা হচ্ছে, পর্যায়ক্রমে উপজেলা পর্যন্ত আমরা বই মেলা নিয়ে যাব। পড়ার অভ্যাসটা সবার থাকা উচিত। ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়েদের বই পড়ার অভ্যাসটা করাতে হবে।”
উদ্বোধন শেষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ভাষা শহীদ ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে বিভিন্ন ফটো গ্যালারী ও ডিজিটাল আলোকচিত্র প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী।
পরে ফিতা কেটে বইমেলার উদ্বেধন করে বাংলা একাডেমি প্যাভিলিয়নে প্রবেশ করেন। বাংলাদেশ পুলিশের স্টল এবং বাংলাদেশ ছাত্রলীগের স্টল মাতৃভূমিতেও যান।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।
এবারের বইমেলা হচ্ছে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। ৬৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৩৭টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এবার বইমেলার বিন্যাস গতবারের মতো অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে। তবে কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রোরেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে মেলার বের হওয়ার পথ এবার একটু সরিয়ে মন্দির-গেইটের কাছাকাছি স্থানান্তর করা হয়েছে। এছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর, এমআরটি বেসিং প্লান্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে মোট ৮টি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ রাখা হয়েছে।
খাবারের স্টলগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের সীমানা-ঘেঁষে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এগুলোকে এবার এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে যাতে তা মেলায় আগত পাঠকের মনোযোগ বিঘ্নিত না করে। নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবাও রাখা হয়েছে বরাবরের মতই।
গতবছরের তো শিশুচত্বরকে রাখা হয়েছে মন্দির-গেইটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের কাছাকাছি গাছতলায়। সেখানে প্রায় ১৭০টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
২০২৪ সাল লিপইয়ার বা অধিবর্ষ। ফলে মেলার মাস ফেব্রুয়ারি পাবে ২৯ দিন। ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না।
ছুটির দিন বইমেলা চলবে বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। প্রতি শুক্র ও শনিবার বেলা ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত মেলায় ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে।
প্রতিদিন বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
২১শে ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮ টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে। এবারের মেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০০টি বই।