নিজস্ব প্রতিবেদক: তালা ভেঙে আড়াই মাস পর রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। কার্যালয়ে ঢুকে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকেছি।’
দুই মাস তিন দিন পর আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রিজভীর নেতৃত্বে কিছু নেতাকর্মী কার্যালয়ের বন্ধ ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা সরকারবিরোধী নানান স্লোগান দিতে থাকেন।
নির্বাচন বর্জন করে সরকার পতনের ‘এক দফা’ দাবি নিয়ে আন্দোলনের মাঠে থাকা বিএনপিকে ছাড়াই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেছে। গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষের পর তালা ঝুলিয়ে দেওয়া এ কার্যালয়ে ভোটের আগে দলটির নেতাকর্মীরা ভিড়তে পারেননি।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের ডাক দেয় বিএনপি। ওই মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের পর কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।
তবে এর চাবি কার কাছে, তা নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি। এ নিয়ে প্রথম থেকেই পুলিশ এবং বিএনপি পরস্পরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়ে আসছে। বিএনপি বলছে, পুলিশ তাদের দলীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ দাবি করে আসছে, বিএনপি নিজেরাই তাদের কার্যালয়ে তালা দিয়েছে।
আজও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে একই দাবি করলেন রিজভী। তিনি বলেন, আমাদের যুবদলের একজন নেতা ও একজন প্রবীণ সাংবাদিক হত্যার মধ্য দিয়ে এক ভয়াবহ নিপীড়নের তাণ্ডব শুরু হয়।
গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ পণ্ড করে পুলিশ এক নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছিল। এই দুই মাসের অধিক সময় পুলিশ কাউকে এখানে ঢুকতে দেয়নি এবং আশপাশে ভিড়লেও তাদের আটক করে নিয়ে গেছে।
তিনি দাবি করেন, পুলিশ এ কার্যালয়ের চাবি নিয়ে যায়। কত নাটক করেছে। তারপর গেট বন্ধ করে দিয়ে চলে যায়। সাংবাদিকরা সবই দেখেছেন, জানেন। আমরা আমাদের প্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন ঢুকেছি। পুলিশের কাছে চাবি চাওয়ার পরেও আমাদের চাবি দেওয়া হয়নি। পরে আমরা তালা ভেঙে কার্যালয়ে প্রবেশ করি।
কার্যালয়ে তালা দেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, সেই দিনের (২৮ অক্টোবর) তাণ্ডবের পর আপনারা দেখেছেন- আপনাদের চোখের সামনে তালা লাগিয়ে পুলিশ চাবি নিয়ে যায়। এরপর কত নাটক ওরা করেছে। আমরা পুলিশের কাছে চাবি চেয়েছিলাম। সেটা তারা দেয়নি।
সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, দেশের একটি নিয়মতান্ত্রিক কার্যকর রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই দল বারবার রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে, দক্ষতার সঙ্গে। সেই দলের প্রধান কার্যালয় একটি মাফিয়াতন্ত্র, একটি মাফিয়া সরকার বন্ধ করে রেখেছে। সুতরাং পুলিশ চাবি না দেওয়াতে তালা ভেঙে আমরা ঢুকেছি।
আজ বিকালে কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে তারা।
রিজভী বলেন, আপনারা দেখেছেন পুরো কার্যালয় কী ভয়ঙ্কর ধুলোবালি জমেছে। এটা এখন আমাদের পরিষ্কার করতে হবে। বেলা ৩টায় আমাদের দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করবেন।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের কথা বলেন। নিজেদের মধ্যে নিজেরা নির্বাচন করেন। নিজেদের জয়, নিজেদের পরাজয় এককভাবে ওদের নিজের জয়।
আজ আড়াই মাস পর খোলা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঢুকে দেখা যায়, পুরো কার্যালয়ের ভেতরে ধুলোবালির আস্তর জমেছে। কক্ষগুলোতে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে চেয়ার-টেবিল, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও পত্রপত্রিকা।