ঈদের পর বেড়েছে মাছ-সবজি-ডিমের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৃষ্টি এবং সরবরাহের ঘাটতির অজুহাতে পবিত্র ঈদুল আজহার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে মাছ, সবজি ও ডিমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সব পণ্যের দাম। তবে কিছুটা দাম কমেছে মুরগি ও আদার। এছাড়া চাল ও রসুনের দাম আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।

সোমবার (৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, কোরবানির ঈদের পর এখনো পুরোপুরি জমে উঠেনি বাজার। অনেক বিক্রেতা এখনো তাদের দোকান খোলেননি। যেসব দোকান খুলেছে, সেখানেও শাক, সবজি, মাছ, মাংসের সরবরাহ কম। ক্রেতার সংখ্যাও সাধারণ সময়ের তুলনায় অনেক কম।

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, কিছু সবজির দাম কমলেও, বেশিরভাগ সবজির দাম ঈদের পর বেড়েছে। এর জন্য বৃষ্টি এবং সরবরাহের ঘাটতিকে দুষছেন বিক্রেতারা।

তারা জানান, বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি ধুন্দুল ৬০ টাকা, পেঁপে ৬০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, উস্তা ৮০ টাকা, বেগুন ৬০-৯০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪৫ টাকা, পটল ৪৫-৫০ টাকা, বরবটি ৭০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, শসা ৫০-৫৫ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, লতি ৭০ টাকা, সজনে ডাটা ১১০ টাকা, কচুরমুখী ১০০ টাকা, কুমড়া ৪০ টাকা ও কাকরোল ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি প্রতি পিস লাউ ৬০ টাকা, চাল কুমড়া ৪০ টাকা, ফুলকপি ৪০ টাকা, বাধাকপি ৩০ টাকা, পানি কচু ৮০ টাকা এবং কাঁচকলার হালি ৩০ টাকা ও লেবুর হালি ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি আটি পুঁই শাক ৫০ টাকা, কুমড়ার শাক ৪০-৫০ টাকা, লাল শাক ২০ টাকা, কলমির শাক ২০ টাকা এবং ডাটা শাক ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে গত কয়েকদিন আকাশচুম্বী দামের পর কমতে শুরু করেছে কাঁচা মরিচের দাম। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ মানভেদে ১৬০-২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মো. জাকির নামের এক সবজি বিক্রেতা বলেন, টমেটো, গাজর, ধনেপাতা, কাকরোল, বেগুনসহ বেশকিছু সবজির দাম কেজিতে ১০-১৫ টাকা বেড়েছে। শুধু টমেটোর দামই ঈদের পর কেজিতে ৫০ টাকা বেড়েছে। তবে শসা, ঢেঁড়স, পটলসহ কিছু সবজির দাম কমেছে। এর ভেতর শুধু শসার দামই কেজিতে কমেছে ৬০ টাকা।

দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঈদের পর এখনো অনেক বিক্রেতা তাদের দোকান খোলেনি। বিভিন্ন জেলা থেকে সবজির ট্রাক আসাও পুরোপুরি শুরু হয়নি। ফলে বাজারে সবজির ঘাটতি রয়েছে। তার ওপর বৃষ্টিতে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। তাই সবজির দাম কিছুটা বেড়েছে। সামনে দাম আরও বাড়তে পারে।

এদিকে সবজির দাম বাড়ায় বিপাকে পড়ছেন ক্রেতারা। কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা নাছির হোসেন নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ঈদের আগে আর পরে কি? সবসময়ই তো দাম বেশি। ৭০-৮০ টাকার নিচে তো কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা একটি বাজেট নিয়ে বাজার করতে আসি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সে বাজেটের দেড় গুণ বেশি টাকা দিয়েও চাহিদামতো বাজার করা যায় না। সবজি কিনতেই ৫০০ টাকার বেশি খরচ হয়ে যায়।

শুধু সবজি নয়, দাম বেড়েছে আলু ও পেঁয়াজের। ঈদের আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হওয়া প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। দেড়শ টাকায় বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের পাল্লা এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২৩০ টাকায় এবং ৩৫০ টাকার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। তবে রসুনের দাম আগের মতোই ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কমেছে আদার দাম। ঈদের আগে ৬০০ টাকায় বিক্রি হওয়া আদা এখন ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আলুর দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মো. বাদল নামের এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, ঈদের পর এখনো আলুর ট্রাক আসা শুরু হয়নি। বাজারে আলুই নেই। তাই দাম বেশি। আলুর ট্রাক আসা শুরু হলে আবার দাম কমে যাবে।

পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মঞ্জুরুল নামের এক বিক্রেতা বলেন, ঈদের সময় বর্ডার বন্ধ ছিল। যার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজ আসেনি। তাই দাম বেড়েছে। এখন আবার আমদানি শুরু হয়েছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে দাম কমে যাবে।

ঈদের পর প্রতি হালি ডিমেও দাম বেড়েছে দুই টাকা। বর্তমানে প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৬ টাকা এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা।

তবে ঈদের পর দাম কমেছে মুরগির। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০-১৭৫ টাকা, সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ৩৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের একদিন আগে এ বাজারেই ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ২১০-২২০ টাকা, সোনালি ৩০০ টাকা এবং লেয়ার ৩৮০ টাকা দরে।

মুরগির দাম কমার কারণ জানতে চাইলে ফখরুল ইসলাম শাহীন নামের এক বিক্রেতা বলেন, মানুষের ফ্রিজে এখনো কোরবানির মাংস রয়েছে। হোটেলগুলোও এখনো ঠিকমতো খোলেনি। যার কারণে মুরগির চাহিদা এখন কম, দামও কম।

এদিকে আগের মতোই অপরিবর্তিত আছে সব ধরনের চালের দাম। বর্তমানে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৭০ থেকে ৭৮ টাকা, আটাশ ৫২ থেকে ৫৪ টাকা, পাইজাম (স্বর্ণা) ৪৭ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

তবে ব্যাপকভাবে দাম বেড়েছে মাছের। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি রূপচাঁদা ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, ইলিশ ১৫০০ থেকে ৪০০০ টাকা, কোরাল ৯০০ টাকা, রুই ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, আইড় ৮০০ টাকা, পোয়া এক হাজার টাকা, তপসী ১১০০ টাকা, বাইলা ১৪০০ টাকা, পুঁটি ১২০০ টাকা, বোয়াল ৪০০ টাকা, চিড়িং ৭৫০ টাকা, টেংড়া ৬০০ টাকা, ফলি ৩০০ টাকা, বাছা ৪০০ টাকা, পাবদা ৩০০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, পাঙ্গাস ২০০ টাকা ও কই ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মনির হোসেন নামে এক বিক্রেতা বলেন, চিংড়ি ছাড়া অন্যান্য সব মাছের দামই ঈদের পর বেড়েছে। কারণ, এখন সরবরাহ কম। আগামী শুক্রবার পর্যন্ত এমন বাড়তি দামই থাকবে মাছের। এরপর কিছুটা কমতে পারে।

মাসুদ রানা নামের একটি কোম্পানির সুপারভাইজার বলেন, টানা কোরবানির মাংস খাওয়ার পর এখন মুখের স্বাদ পরিবর্তন করতে একটু মাছের চাহিদা থাকবে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিক্রেতারা মাছের দাম ব্যাপক বাড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বাজারে মাছও অনেক কম। দুই রকমের মাছ কিনতে বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু যে দাম, তাতে শুরু আধা কেজি চিংড়ি কিনেই ফিরতে হচ্ছে। শুধু মাছ নয়, বাজারে কোনো কিছু কিনেই শান্তি নেই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title