নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকায় এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, রাজধানীতে সবার জন্য পানির দাম এক হবে না, এলাকাভিত্তিক দাম নির্ধারণ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে ঢাকা ওয়াসা আয়োজিত বিল কালেকশন অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ঢাকার অভিজাত এলাকার পানির মূল্য আর দরিদ্র জনবহুল এলাকার পানির মূল্য একই হওয়া বৈষম্যমূলক। আমি ওয়াসাকে বলেছি, জোন অনুযায়ী পানির দাম হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় পাঁচ মিনিটের দূরত্ব পার হতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। এ শহরে কত লোক থাকবে, সেটি নির্ধারণ না করলে নাগরিক সুবিধার ওপর চাপ বাড়তেই থাকবে। এখন সবাই ঢাকায় আসে ভালো জীবনযাপনের জন্য। দেশের সব মানুষকে ঢাকায় রাখতে পারব না। ২০ মিলিয়ন মানুষ ঢাকায় থাকে। উন্নত শহরের মতো ঢাকায়ও মানুষ কাজে আসবে, কাজ শেষে চলে যাবে।
দুই বছর ধরে এলাকাভিত্তিক পানির মূল্য নির্ধারণের কথা ভাবছে ঢাকা ওয়াসা। যদিও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। সবশেষ ২০২২ সালের ১৭ জুলাই ঢাকা ওয়াসা ও ওয়াটার এইড বাংলাদেশ যৌথভাবে এলাকাভিত্তিক পানির দাম নির্ধারণবিষয়ক কারিগরি গবেষণার ফল প্রকাশ করেছিল। রাজধানীকে ১০টি জোনে ভাগ করে এলাকা ও গ্রাহকের সামর্থ্যের ভিত্তিতে পানির নতুন দাম নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।
বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার পানির গ্রাহক দুই শ্রেণির। আবাসিক ও বাণিজ্যিক। আবাসিকে এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। আর বাণিজ্যিকে ৪২ টাকা। ঢাকা ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ব্যয় হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা।
প্রস্তাব অনুযায়ী, উচ্চবিত্তের আবাসিক গ্রাহকদের জন্য প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য দাম ধরা হয়েছে ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি হাজার লিটারে উচ্চবিত্তদের জন্য দাম বাড়ছে ২২ টাকা ৩২ টাকা। ওয়াসার উচ্চবিত্ত গ্রাহক শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
কালবেলা পত্রিকা অনলাইনের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের পানির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ টাকা ২৫ পয়সা। উৎপাদন মূল্যে পানি পাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির গ্রাহকরা। দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ টাকা।
ঢাকা ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ হাজার লিটার পানি উৎপাদনে ব্যয় হয় ২৫ থেকে ২৬ টাকা। ঢাকা ওয়াসার মধ্যবিত্ত গ্রাহক ৪ শতাংশ। তাদেরও বর্তমান দামের চাইতে ৯ টাকা ৮২ পয়সা বেশি হারে বিল দিতে হবে। ঢাকা ওয়াসার নিম্ন মধ্যবিত্ত গ্রাহকই সর্বাধিক, যা মোট গ্রাহকের ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ। তাদের জন্য পানির দাম হবে ১৮ টাকা ৫০ পয়সা।
প্রস্তাব অনুযায়ী, নিম্ন আয়ের গ্রাহকের জন্য ১ হাজার লিটার পানির বিল হবে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। ফলে তাদের বিল এখনকার চেয়ে প্রতি হাজার লিটারে ২ টাকা ৬৮ পয়সা কম হবে। ওয়াসার সাড়ে ১১ শতাংশ বাণিজ্যিক গ্রাহক বর্তমানে প্রতি হাজার লিটার পানির জন্য ৪২ টাকা দিচ্ছে। নতুন প্রস্তাবে সেই বিল ৮ টাকা বাড়িয়ে ৫০ টাকা ধরা হয়েছে। তবে উৎপাদন মূল্যের সমান, অর্থাৎ ২৫ টাকা হারে বিল পরিশোধ করবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো।
গ্রাহকদের কাছ থেকে পানির বিল আদায়ের জন্য ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ ৪০টি ব্যাংক ও ৪টি মোবাইলে আর্থিক সেবা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ বিল আদায়কারী ১০টি প্রতিষ্ঠানকে আজ পুরস্কার দিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। কাউন্টারের মাধ্যমে পানির বিল আদায়ের দিক থেকে প্রথম হয়েছে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, দ্বিতীয় প্রিমিয়ার ব্যাংক ও তৃতীয় সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড।
মোবাইলে বিল আদায়ের মাধ্যমে এমএফএসদের মধ্যে প্রথম হয় নগদ, দ্বিতীয় বিকাশ ও তৃতীয় রকেট। ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে বিল আদায়ে প্রথম ব্র্যাক ব্যাংক, দ্বিতীয় ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ও তৃতীয় দ্য সিটি ব্যাংক। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিল আদায়ের জন্য পুরস্কার পায় ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড।
ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, মহাহিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব খাইরুল ইসলাম, ঢাকা ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায়, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম মোস্তফা কামাল মজুমদার, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, দ্য সিটি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাসরুর আরেফিন উপস্থিত ছিলেন।