নিজস্ব প্রতিবেদক: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন আগামী ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের গতকালের সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যে আয়োজনের ব্যয় কমাতে নির্দেশ দিয়েছেন সভাপতি শেখ হাসিনা। তাই অন্যান্যবারের তুলনায় এবারের সম্মেলন অনেকটা সাদামাটাভাবেই একদিনে সম্পন্ন হবে। বৈঠকে উপস্থিত দলের একাধিক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বণিক বার্তাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বৈঠকের বিরতিতে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৪ ডিসেম্বর এবারের সম্মেলন হবে। আওয়ামী লীগের সম্মেলন সাধারণত দুদিনব্যাপী হয়ে থাকলেও এবার একদিনেই শেষ হবে। সম্মেলনের অনুষ্ঠানসূচির তথ্য তুলে ধরে সাধারণ সম্পাদক জানান, ওইদিন সকালে উদ্বোধনী অধিবেশন দিয়ে সম্মেলন শুরু হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। কাউন্সিল অধিবেশন হবে দুপুরে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ২২তম ত্রিবার্ষিক সম্মেলন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বিকাল ৪টায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। দলের এবারের জাতীয় সম্মেলন সাদামাটাভাবে করা হবে জানিয়ে বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, প্রস্তুতি কমিটি করতে হবে। কতগুলো উপকমিটি করতে হবে। তবে যেহেতু বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা যাচ্ছে, ফলে এবারের সম্মেলন আমরা কোনো শান-শওকত করে করব না। খুব সীমিত আকারে, অল্প খরচে, সাদাসিধাভাবে আমাদের সম্মেলন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমরা করে যাব। আমার কথা হচ্ছে—আমাদের উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং ভবিষ্যতের জন্য আমরা যে পরিকল্পনাগুলো নিয়েছি সেটাও মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। আর বিএনপির আমলে তারা লুটপাট, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, অত্যাচার, নির্যাতন, খুন, রাহাজানিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা না করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বিজয় অর্জনকারী বাংলাদেশকে তারা বিশ্বের কাছে ভিখারি দেশে পরিণত করেছিল। হাত পেতে চলার দেশে পরিণত করেছিল। সেখান থেকে দেশকে আমরা তুলে এনে আজ আত্মমর্যাদাশীল একটা রাষ্ট্র করেছি। যে বাংলাদেশকে সারা বিশ্বের মানুষ একটা সম্মানের চোখে দেখে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বলেই বিএনপি আন্দোলন করতে পারছে। আজ স্বাধীনভাবে মিছিল-মিটিং করতে পারছে। কিন্তু যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত; যারা রেল, বাস, সিএনজি, লঞ্চ প্রতিটি জায়গায় আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে; যারা এ খুনের সঙ্গে জড়িত, জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত তাদের কোনো ছাড় নেই। আমি জানি তারা অনেকে লুকিয়ে ছিল। এখন বিএনপি মাঠে নেমেছে, তারাও মাঠে নামবে। এসব আসামিকে কিন্তু ধরতে হবে। তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে। কারণ তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। জীবন্ত মানুষ হত্যা করেছে। চোখ-হাত কেটেছে, মানুষকে নির্যাতন করেছে। আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন সবার জন্য সমান। এটা তাদের মাথায় রাখতে হবে। রাজনীতি করবে রাজনীতি হিসেবে। কিন্তু সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী রাজনীতি এ দেশে চলবে না। এটা আমরা চলতে দেব না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ এ উপমহাদেশের পুরনো সংগঠন। মানুষের জন্য কাজ করে মানুষের হূদয় জয় করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। জনগণের ভোটে এসেছি, জনগণের আস্থা নিয়ে এসেছি। সেই আস্থা আমরা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ১৪ বছর আমরা এ দেশের মানুষের আস্থা-বিশ্বাস ধরে রেখেছি। আওয়ামী লীগ আরো বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এটা আমাদের মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। আর যারা সন্ত্রাসী, খুনি, দশ ট্রাক অস্ত্র, গ্রেনেড হামলাকারী, বোমা হামলাকারী এদের দেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। এদের পাশেও কোনো দিন থাকবে না। এদের ভোটও দেবে না। এটাই হলো বাস্তবতা।
বৈঠকে জাতীয় সম্মেলন ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ছিল সারা দেশের সাংগঠনিক অবস্থা নিয়ে পর্যালোচনা, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রস্তুতি ও কৌশল নির্ধারণসহ একগুচ্ছ এজেন্ডা। বৈঠকে থাকা একাধিক নেতা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এসব সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনগুলোর সম্মেলন প্রসঙ্গে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনের বিষয়ে আমাদের নেত্রী দলের সাধারণ সম্পাদকের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন। পরে তিনি আমাদের নিয়ে বসে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভব্য তারিখ ঠিক করবেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বণিক বার্তাকে বলেন, আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। শিগগিরই সংগঠনগুলোর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হবে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা একাধিক নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনের আগে দলকে শক্তিশালী করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব জেলায় এখনো সম্মেলন হয়নি দ্রুত সেগুলো শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় সভাপতি। এছাড়া কোথাও কোন্দল থাকলে সেগুলোও দ্রুত নিরসনের নির্দেশনা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহম্মদ ফারুক খান বণিক বার্তাকে বলেন, সার্বিকভাবে আমাদের সংগঠনকে আরো গুছিয়ে তোলার জন্য কী কী করা দরকার সে নির্দেশনাগুলোই দিয়েছেন নেত্রী। আমরা সেভাবেই কাজ করব। তিনি আরো বলেন, আমাদের দলে প্রতিযোগিতা আছে, তবে কোন্দল নেই। কোথাও যদি থেকেও থাকে সেটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে হবে।
সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, জাতীয় সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। এর মধ্যে যেসব জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন বাকি আছে সেগুলো দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন নেত্রী। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা বৈঠকে সম্ভাব্য তারিখ অবহিত করেছেন। আর যেসব জায়গায় সংকট রয়েছে নেত্রী সেগুলোও নিরসনের নির্দেশ দিয়েছেন।
জানতে চাইলে আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা হয়েছে। নেত্রী কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। অসাংগঠনিক কাজকর্ম যারা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।