অনলাইন ডেস্ক: ঈদ এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ আনন্দ-উৎসব, যা বারবার ফিরে আসে প্রতি বছর। তবে ঈদ নিছক আনন্দ-উল্লাস-ই নয়; বরং তা আল্লাহর ক্ষমা ও করুণা লাভের মাধ্যম এবং বিশেষ ইবাদত।
ঈদ মহা মিলনের দিন, পরস্পর একাত্ম হয়ে যাওয়ার দিন, ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলে যাওয়ার দিন। তাই তো সব ভেদাভেদ ভুলে মুসলিমরা সেদিন একে অপরের সাথে কোলাকুলি করে, হৃদয়ের সাথে হৃদয়ের একাত্মতা প্রকাশ করে, ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ে আরো কতো কী! এর মানে এই নয় যে, ঈদের দিনেই শুধু ভেদাভেদ ভুলে যেতে হবে, অন্যদিনে নয়; বরং ঈদ পরস্পরে মধ্যে বিদ্যমান পুরনো সব ঝামেলা মেটানোর এক মোক্ষম সুযোগ।
রাসুলুল্লাহ সা: জাহেলি যুগের খেল-তামাশা, আনন্দ-উৎসবকে বাতিল ঘোষণা করেন এবং মহান আল্লাহর থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন পবিত্র ঈদ। কিন্তু আমাদের অনেকে ঈদকে পরিণত করেছি শুধুমাত্র উৎসবে। ত্যাগের বদলে মেতে উঠেছি ভোগে।
মুমিনের আসল আনন্দ ইবাদতের মাঝে । ইবাদতের মাধ্যমেই সে আনন্দ প্রকাশ করবে। আমাদের সামনে পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই এখানে এ ঈদের কিছু সুন্নত উল্লেখ করা হলো-
১. মেসওয়াক করা।
২. ঈদের নামাজের আগে গোসল করা।
৩. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা।
৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫. ঈদের নামাজের আগে কিছু না খাওয়া।
৬. ঈদগাহে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্যপথ দিয়ে ফেরা। (সহিহ বুখারি : ৯৮৬)
৭. সম্ভব হলে ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ১২৯৬)
৮. ঈদের দিন তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করা। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে, আর নারীরা পাঠ করবে নীরবে। এ তাকবির জিলহজ মাসের ৯ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করবে। (ফাতহুল বারি : ২/৫৮৯)
৯. ঈদের দিনে ছোট-বড় সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কেরামদের সম্ভাষণ ছিলো, ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’। (অর্থ : আল্লাহ আমাদের ও তোমার আমল কবুল করুন)। (ফাতহুল বারি: ২/৪৪৯)
১০. কোরবানির গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজ পরিবারের জন্য রাখবে, এক ভাগ আত্মীয়-সজনকে হাদিয়া দিবে আর একভাগ গরিব-মিসকিনদের মাঝে বিতরণ করবে।
ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড়ের কারণে যেন পরিবেশ দূষিত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এ ব্যাপারে প্রত্যেক মুসলিমের সতর্ক হওয়া উচিত। কোরবানি শেষ হওয়ার সাথে সাথে আবর্জনা ও হাড় নিরাপদ দূরত্বে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে। যেন কারো কোনো কষ্ট না হয়। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ দিনের পবিত্রতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন এবং ঈদকে শুধু উৎসব নয়; ইবাদত হিসেবেও গ্রহণের তাওফিক দিন। আমীন।
লেখক : মুহাদ্দিস-জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লা।