প্রাইমটিভি বাংলা(অনলাইন),ইন্টারন্যাশনাল ডেক্সঃ
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির নেতা-কর্মীরা হামলা–মামলা, গুম, খুন, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। দেশের রাজনীতির রাজপথে আগের তুলনায় অনেকটাই নিষ্প্রভ ও নিষ্ক্রিয় বিএনপির নেতা–কর্মীরা। নানা ইস্যুতে আন্দোলনের চেয়ে সভা–সেমিনারে বেশি দেখা যায় দলটিকে। ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা কর্মকাণ্ডে এক ধরনের স্থবিরতা নেমে এসেছে।
দেশের বাহিরে আমেরিকায় বিএনপি আছে। নেতারা আছেন, কর্মীরা আছেন। তবে নেই কোনো কমিটি। দীর্ঘ আট বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির কোনো কমিটি হচ্ছে না। ফলে এ নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে হতাশা রয়েছে। কমিটি না থাকায় দলীয় নানা কর্মসূচি তাদের আলাদাভাবে পালন করতে দেখা যায়।
দেশের মতো আমেরিকায় সরকারি দল ও পুলিশের চড়াও হওয়ার ভয় না থাকলেও কমিটি না থাকায় যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির রাজনীতি স্থবির হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে প্রবাসে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে দলীয় রাজনীতি ও কমিটির ব্যাপারে কেন্দ্রের উদাসীনতা, স্টেট কমিটির মাধ্যমে দলীয় রাজনীতি পরিচালনার সিদ্ধান্তে চরম হতাশা আর সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন প্রবাসের নেতা–কর্মীরা। এ দেশে প্রায় আট বছর ধরে কমিটিবিহীন চলছে বিএনপির রাজনীতি।
সর্বশেষ আবদুল লতিফ (সম্রাট) ও জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বাধীন কমিটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে ভেঙে দেওয়ার পর আর নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। দলের যুক্তরাষ্ট্র শাখার কমিটি গঠনের দাবির পাশাপাশি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
স্থানীয় বিএনপির নেতারা জানান, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বসবাসরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের নির্দেশে কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এহছানুল হক (মিলন) কয়েক বছর আগে এ দেশে সফরে এসে জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি নয়, কেন্দ্রের নির্দেশে স্টেট কমিটির মাধ্যমে বিএনপির রাজনীতি পরিচালিত হবে। সেই লক্ষ্যে তিনি সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি স্টেট ভ্রমণ করে কমিটিও গঠন করেন।
এহছানুল হকের এই সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করেন যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা আবদুল লতিফ, জিল্লুরসহ অনেকে। তবে এহছানুলের পক্ষে অবস্থান নেন শরাফত হোসেন, জসিম ভূঁইয়া প্রমুখ। তাদের আপত্তি এবং দলের নেতা–কর্মীদের মধ্যে বিভক্তির কারণে অঙ্গরাজ্যগুলোর কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে এহছানুল আবার যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসলেও কমিটি গঠনের ব্যাপারে আর কোনো আলাপ করেননি।
সদ্যপ্রয়াত সাবেক মন্ত্রী ও অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা জীবিত অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির কমিটি গঠনের ব্যাপারে নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় বিএনপির আরও একাধিক নেতাও বিভিন্ন সময় যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে কমিটি গঠনে কোনো ভূমিকা রাখেননি। তাঁরা কেবল বলে গেছেন, এ ব্যাপারে দলীয় চেয়ারপারসন কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান সরাসরি তদারকি করেন।
দলীয় নেতা-কর্মীরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কমিটি গঠন জরুরী হয়ে পড়েছে। এমনই মতামত জানালেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান, প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গিয়াস আহমেদ, শরাফত হোসেন, সাবেক সহসভাপতি সোলেমান ভূঁইয়া, সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সামসুল ইসলাম, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, যুগ্ম সম্পাদক হেলাল উদ্দীন প্রমুখ। নতুন কমিটি হলে এঁদের কেউ সভাপতির দায়িত্ব পাবেন বলেও তাঁরা আশা করছেন। তাঁরা চান, দ্রুত যুক্তরাষ্ট্র শাখা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করুন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।