প্রণোদনার ঋণ পরিশোধ করছে না বড় গ্রাহকরা, বিপাকে ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের এক বছরে প্রায় এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনার ঋণ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বড় গ্রাহকরাই নিয়েছেন বেশির ভাগ। এসব ঋণ পরিশোধের নির্ধারিত সময় পার হয়ে গেলেও বেশির ভাগ বড় গ্রাহক পরিশোধ করতে পারছেন না। উল্টো এখন ব্যাংকের কাছে বাড়তি সময় চাচ্ছেন তারা। এতে উভয় সঙ্কটে পড়েছেন ব্যাংকাররা। এক দিকে সময় বাড়িয়ে না দিলে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাবে, এতে বাড়তি প্রভিশন রাখতে গিয়ে কমে যাবে আয়। অপর দিকে, বাড়তি সময় দিলে ঋণ আদায়ের হার কমে যাবে। এতে প্রভাব পড়বে ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতার ওপর। এর পরেও গ্রাহকদের চাপে বাধ্য হয়েই ব্যাংকগুলো এক বছর সময় বাড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট নন অনেক গ্রাহক। তারা দুই বছর সময় চাচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালার বাধ্যবাধকতায় এক বছরের বেশি সময় বাড়ানো যাবে না। সব মিলেই প্রণোদনার ঋণ নিয়ে বিপাকে পড়েছে দেশের ব্যাংকিং খাত।

ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে জানান, তিনি ছোট গ্রাহকদের যে ঋণ দিয়েছিলেন তার প্রায় পুরোটাই আদায় করতে পেরেছেন। সমস্যা দেখা দিয়েছে বড় গ্রাহকদের ক্ষেত্রে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শেষ হয়নি। করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার একটানা প্রায় দেড় মাস লকডাউন দিয়েছিল। এ সময় ব্যবসাবাণিজ্য তেমন হয়নি। এ কারণে বড় গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। তারা এখন দুই বছর সময় চাচ্ছেন। কিন্তু নীতিমালা অনুযায়ী এক বছরের বেশি সময় দেয়া যাবে না। কিন্তু অনেকেই দুই বছর সময় চাচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে গ্রাহকদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, গত পুরো বছর এবং চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ মার্চ পর্যন্ত ঋণ পরিশোধে শিথিলতা ছিল। করোনার কারণে ব্যবসা মন্দায় সবশ্রেণীর ঋণে এ সুবিধা দেয়া হয়েছিল। কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও তাদেরকে খেলাপি করা হয়নি। এ সুযোগ পরবর্তীতে জুন মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়। এর পরেও অনেকে ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, বকেয়া কিস্তির ওপর ২০ শতাংশ এককালীন কেউ পরিশোধ করলে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ওই গ্রাহককে খেলাপি করা হবে না।

এদিকে, প্রণোদনার প্যাকেজের নীতিমালা অনুযায়ী চলতি মূলধন জোগান দেয়া হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। এ ঋণ এক বছরের জন্য গ্রাহক নিতে পারবেন। আবার এক বছরের মধ্যেই তাকে ফেরত দিতে হবে। এতে গ্রাহক যেমন সুদহারের ওপর ছাড় পাবেন, তেমনি ব্যাংক ছাড়ের অংশটুকু সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পাবে। যেমন, বৃহৎ ও সেবা খাতে গ্রাহক এক বছরের জন্য ঋণ নিলে সুদ হারের ওপর সাড়ে ৪ শতাংশ ছাড় পাবেন। অর্থাৎ ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে সাড়ে ৪ শতাংশ এবং গ্রাহকের পক্ষে সরকার পরিশোধ করবে সাড়ে ৪ শতাংশ। তেমনি ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি ঋণের জন্য গ্রাহককে ৯ শতাংশ সুদের মধ্যে ৪ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে, বাকি ৫ শতাংশ সরকার পরিশোধ করবে। এ সুযোগ এক বছরের জন্য। এক বছরের মধ্যে গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে আর এক বছর সময় বাড়িয়ে দিতে পারবে ব্যাংক। কিন্তু গ্রাহক সুদের হারের ওপর কোনো ভর্তুকি পাবেন না। এসব বাধ্যবাধকতায় ব্যাংক এক বছরের বেশি সময় বাড়াতে পারছে না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title