সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ফোন ফরেনসিকে পাঠালো ডিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কারাবন্দি সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার জব্দ করা মোবাইল ফোন দুটি ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানোরও প্রক্রিয়া শুরু করেছে তদন্ত সংস্থা। পাশাপাশি মামলার নথিপত্রও যাচাই শুরু হয়েছে। এদিকে রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার ও তার মুক্তি দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। তার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে গতকাল শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৮৩ বিশিষ্ট নাগরিক। পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় গত সোমবার সচিবালয়ে রোজিনা ইসলামকে আটকে রেখে হেনস্তা করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। রাতে তাকে শাহবাগ থানা পুলিশে হস্তান্তর করে নথি চুরি ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরদিন পুলিশ তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করলে বিচারক রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

গত বৃহস্পতিবার তার জামিন আবেদনের শুনানি হলেও আদালত আগামীকাল রোববার এ বিষয়ে আদেশের দিন ধার্য রেখেছেন। রোজিনা এখন কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। শুরুর দিকে মামলাটি শাহবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করলেও বর্তমানে ডিবির রমনা বিভাগ তদন্ত করছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানীর দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের খালি কক্ষে ঢুকে দাপ্তরিক গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র শরীরের বিভিন্ন স্থানে লুকান এবং মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলেন। ওই সময়ে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য বিষয়টি দেখতে পেয়ে বাধা দেন। পরে অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম তল্লাশি করে তার কাছ থেকে ‘বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টেসের ছবি’ সংবলিত মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন।

এজাহারে আরও বলা হয়, এসব কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ বিধায় মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত আছে, যা পরে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদর্শন করা হবে। তবে পুলিশের তৈরি করা জব্দ তালিকায় বলা হয়, আলামত হিসেবে জেনেভার বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের অ্যাম্বাসেডরের পাঠানো দুই পাতার ডিও লেটার, কভিড-১৯ মোকাবিলায় ব্যবহূত চিকিৎসা সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদনের লক্ষ্যে ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানোর জন্য সিএমএসডির পরিচালকের পাঠানো ৫৬ পাতা, সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির জন্য দুই পাতার সারসংক্ষেপ, করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা সংগ্রহ ও বিতরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় পরামর্শ কমিটি অনুমোদন সংক্রান্ত অনুমোদিত দুই পাতার সারসংক্ষেপ, একটি আইফোনসহ দুটি মোবাইল ফোনসেট ও দুটি পিআইডি কার্ড জব্দ করা হয়। জব্দ তালিকায় আরও বলা হয়, অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগমের উপস্থাপন মতে উপরোক্ত ডকুমেন্টস ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হলো।

এদিকে দাবি করা কাগজপত্র গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে মামলার এজাহারে নিজেদের কাছে রেখে দেওয়ার কথা বলা হলেও জব্দ তালিকায় তা কীভাবে এলো, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া জব্দ তালিকা অনুযায়ী তা রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করেনি।

এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুলে গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশে সংগঠনটির সহসভাপতি ওসমান গণি বাবুল বলেন, রোজিনা ইসলামের কাছ থেকে কোনো নথি জব্দ করেনি পুলিশ, করেছে বাদীপক্ষ অতিরিক্ত সচিবের কাছ থেকে। জব্দের তালিকা থেকে দেখা গেছে, রাষ্ট্রীয় গোপনীয় কোনো তথ্য নেই।

মামলার তদন্ত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, এজাহারে মোবাইল ফোনে গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তোলার অভিযোগ ছাড়াও নথি চুরির অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণের জন্য জব্দ করা মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজন। এ জন্য আদালতের অনুমতিও প্রয়োজন। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে থাকা সিসিটিভির ফুটেজও যাচাই করা হবে। তদন্ত কর্মকর্তারা সেই পথেই হাঁটছেন।

মামলাটির তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ডিবির রমনা বিভাগের উপকমিশনার এইচ এম আজিমুল হক প্রাইম টিভি বাংলাকে বলেন, তারা মামলাটির আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্তের প্রয়োজনে যা করা দরকার, তাই করা হবে।

রোজিনা মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে :ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশের তৃতীয় দিন গতকাল কারাবন্দি এই সাংবাদিক মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা। তারা বলেছেন, রোজিনার বিরুদ্ধে মামলা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি মুক্ত না হলে মুক্ত সাংবাদিকতার অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়বে। ব্যক্তিগত তথ্য ও ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে সাংবাদিকদের ঐক্যে যাতে বিভেদ সৃষ্টি করা না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতেও বলেছেন নেতারা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title