অপরিকল্পিত পুকুর খননে কৃষকরা জিম্মি, প্রশাসনে জোড়াল ভুমিকা নেই

ওবায়দুল ইসলাম রবি, রাজশাহী প্রতিনিধি:অপরিকল্পিত পুকুর খননে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ব্যাপকহারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিরও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বছর বর্ষা মৌসুমে শুধুমাত্র পুকুর খননের কারনে ব্যাপক বন্যার কবলে পরে বাগমারায় উপজেলা। স্থানীয় কৃষকরা জানান. এ বছরও একই হারে বন্যার শঙ্কা রয়েছে বাগমারা, দূর্গাপুর, পুঠিয়া, মোহনপুর, চারঘাট, তানোর ও মোহনপুর উপজেলায়। অপরদিকে বিকল্প পরিবহনের কারনে সড়ক দূর্ঘনাসহ সরকারী প্রকল্পের বিভিন্ন স্থপনার ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে।
গত শীত মৌসুম থেকে শুরু করে আজ অবদি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধ খনন চলমান রয়েছে। দূর্গাপুরের উজান খলশি, নওপাড়া, দাওকান্দিসহ বাগমারা, পবা, মোহনপুর, তানোর, পুঠিয়া, চারঘাট ও বাঘায় ব্যাপক হারে এবার পুকুর খনন হচ্ছে। ওই সকল পুকুরের মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ইটের ভাটায়। পুকুর খনন এবং ইট ভাটার বিকল্প পরিবহনের কারনে ৯টি উপজেলার গ্রামের নতুন ও পুরাতন কার্পেটিং রাস্তা যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একইভাবে ব্যাপক হারে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষি জমি।
অনুসন্ধানে জানাযায়, জেলার বিভিন্ন বিলে এ বছর অন্তত এক হাজার পুকুর খনন করা হয়েছে। দূর্গাপুর উপজেলায় প্রায ৬শতটি পুকুর খনন করার তথ্য পাওয়া গেছে। ওইসকল পুকুর খননে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িত। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কোনো অনুমতি ছাড়ায় পুকুর করা হচ্ছে। অবৈধ পুকুর খননের বন্ধের বিরুদ্ধে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে প্রশাসনের কাছে শতাধিক লিখিত অভিযোগ জমা হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে অনুষ্ঠানিকভাবে স্থানীয় থানা পুলিশ ও কথিত সাংবাদিক ঘটনাস্থলে গেলেও কোন এক কারনে তার কোন প্রতিকার হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে স্থাণীয় কৃষক ও সচেত ব্যাক্তি বর্গ। অপরদিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্দ্যেগে অভিযান পরিচারনা করে জরিমানা করা হয়েছে কিন্তু বন্ধ করা যায়নি পুকুর খনন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে পবার একটি বিলের মাঝে অন্তত ৪০ বিঘা জায়গা দখল করে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পুকুরটি খনন করছেন পারিলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও হরিয়ান ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু। তাঁরা দু’জনেই আওয়ামী লীগ নেতা। তাদের দাপটে স্থানীয় কৃষকদের কৃষি জমি বছর চুক্তিতে অনেকটা জোর করে বন্ধক নিয়ে পুকুর খনন হচ্ছে। এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি। বরং দুই নেতার দাপটে তটস্থ হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। পবা উপজেলায় চলতি বছরে শতাধিক পুকুর খনন করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। যার ফলে কৃষি জমি যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হেয়ছে, তেমনি পুকুর খননের মাটি পরিবহণের জন্য নতুন-পুরাতন গ্রামীণ রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে উঠেছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। অন্যথায় চারঘাট, পুঠিয়া, বাঘাসহ বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর খনন চলছেই। ইতোপূর্বে প্রশাসন ব্যাপক বাধার কারনে বিছু সংখ্যক পুকুর খনন হলেও পুকুর সিন্ডিকেট তটস্থ ছিল। কিন্তু এবার প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন চলছে। অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি বওে অভিযোগ করেছে স্থানীয় কৃষকরা।
জেলা ও উপজেলার কৃষিবিদ এর তথ্য মতে মৎস্য একটি কৃষি তবে অপরিকল্পিত ভাবে পুকুর খনন করলে কৃষি ফসল ফলানোর জমি সংকটের আশঙ্কা রয়েছে। শুধু মাছ খেয়ে মানুষ জীবন যাপন করতে পারবে না। সর্বাধিক গুরুত্ব কৃষিতে দিতে হবে তাহলেও কৃষক ও কৃষি দু’ই বাচঁবে। এছাড়া কৃষি দপ্তর অবৈধ পুকুর খনন করার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করার অনুমতি থাকলে অনেকাংশে পুকুর খনন বন্ধ হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদ। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুকুর খনন একাধিক অভিযোগ আসছে। স্থানীয় প্রশাসন মাঝে মধ্যে তদন্ত সাপেক্ষে অভিযান পরিচালনা করছে। বর্তমান দেশের করোনা ভাইরাসের কারনে মানুষের জীবন যাত্রা স্থবির হয়ে গেছে। সর্বপরি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ঘটনা স্থল তদন্ত করে অবৈধ পুকুর খননের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title