বগুড়া প্রতিনিধি:বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিসহ তিনটি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করেছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। এছাড়াও পুনম হোমিও ল্যাবরেটরি ও জেলার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (ইউনানি) প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিল করা হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে গত ২০ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটিতে বগুড়ার তিনটিসহ সারাদেশের বিভিন্ন ক্যাটাগরির মোট ৮০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উৎপাদন ও মান নিয়ন্ত্রণে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ না করা এবং উৎপাদন লাইসেন্স ইস্যুর শর্ত ভঙ্গের দায়ে বগুড়ার পারুল হোমিও ল্যাবরেটরি প্রাইভেট লিমিটেড এবং পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজের উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হলো।
এছাড়া ড্রাগ কন্ট্রোল আইন ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা লঙ্ঘনের দায়ে বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরিজের (ইউনানী) উৎপাদন লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে।
চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি রাতে শহরের পুরান বগুড়া এলাকায় একটি বিয়ে বাড়িতে এবং শহরের কালিতলা ও ভবের বাজার এলাকায় বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে মারা যান ছয়জন। পরবর্তী কয়েক দিনে বগুড়ার কাহালু এবং শাজাহানপুর এলাকায় আরও ১০ জনসহ মোট ১৬ জনের মৃত্যু হয়। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ওই সময় বিষাক্ত মদ পানে আট ব্যক্তির মৃত্যুর কথা জানানো হয়। তখনই পুলিশী তদন্তে পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির নাম আসে। কারণ মৃত ব্যক্তির স্বজনদের তথ্য ও অসুস্থদের স্বীকারোক্তি অনুসারে বিষাক্ত অ্যালকোহল কেনার ব্যাপারে পারুল হোমিও ল্যাবরেটরী নাম আসে।
পরবর্তীতে বিষাক্ত অ্যালকোহল পানে অসুস্থ এক ব্যক্তির ভাই মনোয়ার হোসেন পারুল হোমিও ল্যাবেরেটরি সহ তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক-কর্মচারীসহ ১৬ জনের নামে বগুড়া সদর থানায় মামলা করেন।
গত ১ ফেব্রæয়ারি রাতে করা সেই মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত পারুল হোমিও ল্যাবরেটরীর স্বত্বাধিকারী শহরের ফুলবাড়ি এলাকার নুরুন্নবী ওরফে নুরনবী (৫৮) এবং তিনটি দোকান যথাক্রমে শহরের গালাপট্টি এলাকার মুন হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী আব্দুল খালেক (৫৫), করতোয়া হোমিও হলের স্বত্বাধিকারী শহিদুল আলম সবুর (৫৫) ও হাসান হোমিও হলের কর্মচারী আবু জুয়েলকে গ্রেফতার করে। তাদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত অ্যালকোহল উৎপাদন এবং বিক্রির অভিযোগ আনা হয়। এদিকে শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়া এলাকায় গ্রেফতার নুরুন্নবীর মালিকানাধীন পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিতে গিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়। বন্ধ ছিল একই ভবনের অপর প্রান্তে অবস্থিত নুরুন্নবীর ভাই নুর আলমের মালিকানাধীন পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজ নামে অপর প্রতিষ্ঠানও।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুনম হোমিও ল্যাবরেটরিজের স্বত্বাধিকারী নুর আলমের স্ত্রী ও কন্যা গত বৃহস্পতিবার (২২ এপ্রিল) ওষুধ প্রশাসন থেকে উৎপাদন লাইসেন্স বাতিলের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
তারা জানান, ফেব্রæয়ারির শুরুতে পুলিশের অভিযানের পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে কারারুদ্ধ নুরুন্নবীর মালিকানাধীন পাশের পারুল হোমিও ল্যাবরেটরিও।
এদিকে উৎপাদন লাইসেন্স স্থগিত করা বগুড়ার কাহালু উপজেলার মেসার্স ইস্টল্যান্ড ল্যাবরেটরিজের (ইউনানী) নামে অপর প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আইয়ুব আলী জানান, তার প্রতিষ্ঠানকে অন্যত্র স্থানান্তর করবেন বলেই তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন।
জেলায় বিষাক্ত মদপানে মৃত্যুর সেই আলোচিত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বগুড়া সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, মামলার তদন্তকাজ এখনও শেষ হয়নি। তাই চার্জশিটও দেয়া যায়নি। গত ফেব্রæয়ারিতে পারুল ও পুনম হোমিও ল্যাবটেরিতে অভিযান চালানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ওই মামলায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাদের মধ্যে পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির স্বত্বাধিকারী নুরুন্নবী এখনও কারাগারে রয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত শেষ হলেই চার্জশিট দেয়া হবে।