সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর সৈয়দপুরে সরকার ঘোষিত লকডাউন উপেক্ষা করে অনেকটা দাপটের সাথেই একটি মাদরাসায় পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। ৭ এপ্রিল বুধবার সকালে শহরের টেকনিক্যাল কলেজপাড়া এলাকার এ দৃশ্য দেখা গেছে। করোনার প্রকোপের সময় কোমলমতি শিশুদের ডেকে নিয়ে পরীক্ষা গ্রহণের ঘটনায় এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সাথে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার সকাল ১০ টায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায় ওই এলাকার আল হেরা হিফজুল কুরআন এন্ড নূরানী কিন্ডারগার্টেন নামের প্রতিষ্ঠানটি খোলা। অফিস কক্ষে প্রায় সব শিক্ষকই উপস্থিত। দ্বিতল ভবনের নিচ তলায় ক্লাস রুমগুলো ফাঁকা। কিন্তু দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে চলছে পরীক্ষা। সেখানে অভিভাবকরাও উপস্থিত। শিশু শ্রেণির ও পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে।
পঞ্চম শ্রেণির পরীক্ষার্থী রেজওয়ানুল ফেরদৌস জানায়, মাদরাসার পরিচালক তাদের অভিভাবকদের মোবাইলে ডেকে নিয়ে পরীক্ষা দিতে বলেছে। তাই তারা এসেছে পরীক্ষা দিতে। আজ বাংলা পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
একই কথা জানায় আরেক পরীক্ষার্থী আদনান। সে শিশু শ্রেণির আরবি পরীক্ষা দিচ্ছে।
সাংবাদিকের উপস্থিতি দেখে অভিভাবকরা সটকে পড়ে। এসময় ভিডিও করতে গেলে মাদরাসার পরিচালক আল মাহদী বাঁধা দেয় এবং হম্বিতম্বি করে। তিনি বলেন, আমাদের বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের এনে প্রশ্নপত্র বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে। তারা বাসায় গিয়ে বোর্ডের দেয়া খাতায় পরীক্ষা দিবে। এখানে কোন পরীক্ষা নেয়া হচ্ছেনা।
শিশুরা পরীক্ষার জন্য ক্লিপবোর্ড, কলম ও পেন্সিল নিয়ে এসেছে কেনো? শিশু ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা খাতায় প্রশ্নের উত্তর লিখছে কেনো? আর শিক্ষার্থীরা নিজেরাই তো বললো তারা পরীক্ষা দিতে এসেছে। তাহলে কি তারা মিথ্যা বলেছে?
এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, গত ৭ মাসে অনেক সাংবাদিক ও প্রশাসন এসেছে। কিন্তু কিছুই করতে পারেনি। আমরা ইক্বরা নূরানী হিফজুল কুরআন বোর্ডের অধীনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি। আমাদেরটা ক্বওমি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে কোন বন্ধ ঘোষনা হয়নি।
কিন্ডারগার্টেনওতো চলছে? এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৈয়দপুর দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা হারুন রিয়াজির সাথে কথা বলতে বলেন। তাঁর সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি জানান, করোনায় তো মাদরাসা খোলা থাকার কথা নয়। তবুও খুলে থাকলে বন্ধ করে দেন।
অভিযোগ রয়েছে উপজেলা প্রশাসনের তত্বাবধানে প্রতিষ্ঠিত ও তদারকিতে পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবীদের সংগঠন সুভা’র ২ জন সদস্য এখানে শিক্ষকতা করেন। এদের মাধ্যমে প্রশাসনের সাথে লিয়াজো রেখে সকল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ। যে কারণে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ওই মাদরাসাটি পরীক্ষা নিচ্ছে বহাল তবিয়তে।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাসিম আহমেদ এর সাথে মুঠোফোন কথা হলে তিনি বিষয়টি দেখছেন বলে জানান।
কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানায় এলাকাবাসী। তারা আরও জানান, এই মাদরাসায় এলাকার কোন শিক্ষার্থী নেই। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র ছাত্রীরা আসে। করোনাকালে বন্ধ রাখার জন্য বলা হলেও তারা শোনেননি। পরিচালকের বাবা ও প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সেনা সদস্য হওয়ায় এবং পরিচালক নিজে হেফাজতের সাথে সম্পৃক্ত থাকায় অনেকটা গায়ের জোরেই চলে। এতে আমরা আতঙ্কে থাকলেও কারো সহযোগিতা পাইনা।