১৫টি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া স্থগিত, বন্ধ না করার আহ্বান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার

নিজস্ব প্রতিবেদক: অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা আবিষ্কৃত করোনাভাইরাস টিকা প্রয়োগ স্থগিত না করার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এটি নিরাপদ বলেও মত দেয়া হয়েছে সংস্থাটির পক্ষ থেকে। যদিও এর আগেই ইউরোপের কয়েকটিসহ বিশ্বের অন্তত ১৫টি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া স্থগিত করেছে। তবে বাংলাদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া অব্যাহত রাখা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়ে তোলপাড়ের মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে তা নিরাপদ উল্লেখ করে টিকাদান স্থগিত না করার আহ্বান এসেছে। সংস্থাটি বলছে, এ টিকার সাথে ব্লাড ক্লট বা রক্ত জমাট বাঁধার কোনো প্রমাণ তারা পায়নি।

অবশ্য জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও স্পেনসহ বেশ ক’টি দেশ পূর্বসতর্কতার অংশ হিসেবে এ টিকা প্রয়োগ স্থগিত রাখার কথা জানিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকা বিশেষজ্ঞরা মঙ্গলবার এ বিষয়ে বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য আজ আলাদাভাবে বৈঠকে বসবে ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ)। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত তারা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে তারা বলছে, টিকা দেয়া অব্যাহত রাখা উচিৎ। ইউরোপে টিকা দেয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওই ঘটনার বাইরে সাধারণ মানুষের মধ্যে এ ধরনের রক্ত জমাট বাঁধার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যের প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণ করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকা কর্তৃপক্ষ বলেছে, এর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ৪০টিরও কম।

যে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে
জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার জানিয়েছে, দেশটির ভ্যাকসিন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী তারা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া বন্ধ করতে যাচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তের কারণ হলো সেরেব্রাল ভেইন থ্রমবোসিস-এর কয়েকটি খবর, যার সাথে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার যোগসূত্র আছে।’ তিনি বলেন, ‘নতুন ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে পল এরলিখ ইনস্টিটিউট (জার্মানি ভ্যাকসিন কর্তৃপক্ষ) পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে টিকাদান স্থগিত রাখার সুপারিশ করেছে।’

এ সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক’ নয় উল্লেখ করে জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা সবাই এ সিদ্ধান্তের পরিণতি সম্পর্কে সচেতন ও আমরা খুব সহজেই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিনি।’

এর পরেই ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ নতুন সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত ঘোষণা করেন। অন্য দিকে ইতালি মেডিসিন এজেন্সি অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কয়েকটি ব্যাচের ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে। আর স্পেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, দেশটিতে টিকাদান অন্তত দু’সপ্তাহের জন্য বন্ধ রাখবে। এর আগে নেদারল্যান্ড ২৯ মার্চ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া স্থগিত করেছে।

অস্ট্রিয়াসহ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ পূর্বসতর্কতার অংশ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার নির্দিষ্ট ব্যাচের টিকা দেয়া স্থগিত করেছে। তবে প্রথমে স্থগিত রাখলেও থাইল্যান্ড মঙ্গলবার থেকে এ টিকা দেয়া শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আশ্বস্ত করেছেন যে অ্যাস্ট্রাজেনেকাসহ যে সব টিকা দেশটিতে দেয়া হচ্ছে এর ‘সবই নিরাপদ’।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতামত
সংস্থাটির মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমেয়ার বলেছেন, টিকা নিয়ে প্রকাশিত খবরগুলো তারা তদন্ত করেছেন। এ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ শিগগিরই জানানো হবে। একই সাথে তিনি বলেন, ‘তবে আজ পর্যন্ত এসব ঘটনার সাথে টিকার কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। ভাইরাস ও গুরুতর রোগ থেকে রক্ষা ও জীবন বাঁচানোর জন্য টিকা দেয়া অব্যাহত রাখা গুরুত্বপূর্ণ।’

এ দিকে যুক্তরাজ্যের মেডিসিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা জনগণকে টিকা নেয়া অব্যাহত রাখতে অনুরোধ করেছে।

বাংলাদেশে চলবে
বাংলাদেশের স্বাস্ব্য সচিব মো: আবদুল মান্নান সোমবার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, ‘আমরা টিকা স্থগিতের মতো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছিনি। পাঁচ-ছয়টি বা সাতটি দেশ সন্দেহের কারণে বন্ধ করেছে।’

এ ব্যাপারে সচিব বলেন, ‘অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকায় যে উপাদানগুলো রয়েছে, রক্ত জমাট বাঁধার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। যেহেতু সম্পর্ক নেই, তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে এই কার্যক্রম বন্ধ করতে পারি না। কারণ বাংলাদেশের মতো দেশগুলো শতভাগ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে চলেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অক্সফোর্ডের যে টিকা আমরা নিয়ে এসেছি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি আনুষ্ঠানিকভাবে বলে যে এটা দেয়া যাবে না, এটার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, আনুষ্ঠানিকভাবে যদি তারা আমাদের চিঠি দেয়, তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমরা অপেক্ষায় আছি।’

তবে শেষ পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার পক্ষেই মত এসেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে।

সূত্র : বিবিসি

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title