পঞ্চম ধাপে দেশের ২৯টি পৌরসভায় নির্বাচন আজ। এ ধাপে প্রচার শুরুর পর থেকেই হুমকি, মামলা আর ধরপাকড়ের অভিযোগ করে আসছিলেন নৌকার বিপক্ষে দাঁড়ানো প্রার্থীরা। সংঘাত হয়েছে প্রচারণার শেষ অবধিই, তাতে নানা শঙ্কায় ভোটাররা।
নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগেই গত সোমবার চাঁদপুরের মতলব পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী এনামুল হক (বাদল) ভোটের প্রচারে বাধাদান এবং সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের হামলা-মামলার হুমকির অভিযোগ তুলে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এরপর আরও কয়েকটি পৌরসভায় ধানের শীষের প্রার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে হুমকি ও প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। রয়েছে হয়রানিমূলক মামলা ও ধরপাকড়ের অভিযোগও।
প্রচারণার সময়জুড়েই ছিল সংঘাতের খবর। প্রচারণার সময় শেষ হওয়ার পরও সংঘাত হয়েছে ভোলা পৌরসভায়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ওয়েস্টার্নপাড়ায় শনিবার বেলা একটার দিকে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কাউন্সিলর প্রার্থী আবদুর রব (উটপাখি) ও ওমর ফারুকের (ডালিম) সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষে চারজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতেও এ দুই পক্ষের সমর্থকেরা সংঘাতে জড়ান। এ সময় সব মিলিয়ে ১৫ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর হয়েছে নির্বাচনী কার্যালয়, দোকানপাট, বোরাক-রিকশা ও মোটরসাইকেল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ মাঠে নেমেছে।
এদিকে ভোলা পৌরসভায় ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫টি বসতবাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী মাইনুল ইসলাম শামীম (উটপাখি) ও মো. মইনুল ইসলামের (টেবিল ল্যাম্প) সমর্থকেরা বিরোধী পক্ষের ওপর পাল্টাপাল্টি হামলা চালান। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ১২ জন ভোটারের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা চরজংলা, ভোকেশনাল রোড, পিটিআইসংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের ভাষ্য, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। শুক্রবার গভীর রাতে উটপাখি ও টেবিল ল্যাম্প প্রতীকের দুই প্রার্থীর কর্মীরা তাঁদের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছেন। অনেককে মারধর করা হয়। ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ সময় গুলি ও বোমা বিস্ফোরণের শব্দও শোনা যায় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই প্রার্থীর পক্ষে এলাকায় দিনভর উত্তেজনা ছিল।
ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এনায়েত হোসেন সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, গুলি-বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, এখন পরিস্থিতি শান্ত। পর্যাপ্ত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও ম্যাজিস্ট্রেট টহলে নেমেছেন।
রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভায় গত শুক্রবার গভীর রাতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দুটি নির্বাচনী প্রচার কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আমজাদ আলী বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় মামলা করেছেন। মামলার বাদী দাবি করেছেন, হামলাকারীরা সবাই বিএনপির সমর্থক। তাঁদের ৩০-২৩ জনের নাম উল্লেখ করে তিনি মামলা করেছেন।
বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি মাহাবুর রহমান বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীদের হয়রানির জন্যই এ মামলা করা হয়েছে। দেশের এ পরিস্থিতিতে বিএনপির সমর্থকেরা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করবেন, এটা অবিশ্বাস্য।
আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা নির্বাচনে ৪৮টি কেন্দ্রের সব কটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে পৌরসভা নির্বাচনে ১৬টি ভোটকেন্দ্র দখল হওয়ার আশঙ্কা করছেন নৌকার মেয়র প্রার্থী নায়ার কবির। গতকাল দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে নৌকার মেয়র প্রার্থীর পক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে ১৬ কেন্দ্র দখলের আশঙ্কার কথা জানান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার। তিনি বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের সিদ্ধান্তে প্রতিটি কেন্দ্রের বাইরে ১০ জন করে নিরপেক্ষ স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। বহিরাগত কেউ পেশিশক্তি প্রদর্শন করতে চাইলে তাঁরা বিশৃঙ্খলাকারীদের চিনিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করবেন।