স্কুল পরিচালনা কমিটির দুর্নীতি তদন্তে শিক্ষা মন্ত্রী ডা: দিপু মনি’র নির্দেশে কাজ করছে তদন্ত কমিটি
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামের শিক্ষানুরাগী ছেফাতুল্লাহ্ মিয়ার প্রতিষ্ঠিত ‘ধুবড়িয়া ফ্রী প্রাইমারি স্কুল’ ও ‘ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়’ দুটিতে চলছে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি আর লুটপাটের মহাউৎসব।
বিগত ২০ বছর ধরে স্কুল দুটির ম্যানেজিং কমিটি বিভিন্ন ব্যাক্তির যোগসাজশে স্কুলের সম্পদ ভোগ দখল করছে বলে অভিয়োগ উঠেছে।
শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, টাইপরাইটার অপেরটর নিয়োগে টাকা গ্রহন, করোনামহামারিতে স্কুল বন্ধের সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরিক্ষা ফি গ্রহন, স্বাস্থবিধি না মেনে পরীক্ষা আয়োজন সহ সুস্পষ্ট নানা অভিযোগের ভিত্তিতে মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ডাঃ দিপু মনি’র নির্দেশে উপ-পরিচালক আবু নূর মোঃ আনিসুল ইসলাম চৌধুরী কে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম প্রেরন করে মন্তনালয়। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে চিঠিতে।
এ দিকে সরাসরি মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত আসায়, সংশিষ্ট বিদ্যালয়ে চাকুরিরত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অনেকেই আত্মপক্ষসমর্থন করে এ সকল দুর্নীতিতে তাদের সম্পৃক্ততা নেই এটি প্রমানে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে। স্বপ্রণোদিত হয়েই সাংবাদিকদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করে দুর্নীতির বিষয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে স্কুলের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে, একজন শিক্ষক সাংবাদিককে বলেন “সর্বাঙ্গে ব্যাথা ওষুধ দিব কোথা”। সমস্যা একটি হলে কথা, সবদিক থেকে বিদ্যালয়টিকে ধংস করে দেওয়া হচ্ছে। এতো নামকরা একটা স্কুলকে চোখের সামনে ধংস হতে দেখে একজন শিক্ষক হিসেবে কষ্ট পাচ্ছি। কিন্তু কিছু বলার নেই। উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিরবতায় এ সমস্যা প্রকোপ আকার ধারন করেছে।
এই স্কুলে পড়াশোনা করা অনেকেই আজ সচিব, সরকারি গন্যমান্য ব্যাক্তি পর্যায়ে রয়েছে।
স্কুলের নিজস্ব সম্পদতো রয়েছেই এছাড়াও প্রায় ৬ শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের বেতন, টিউশন ফি সহ নানা আয় আছে, স্কুলের নিজস্ব সম্পদ হিসেবে পুকুর, কৃষি জমি, বাজারে প্রায় শতাধিক দোকান রয়েছে, অথচ স্কুলের একাউন্ট শুন্য!
একটি টাকাও নেই বিদ্যালয়ের ব্যাংক একাউন্টে।
কয়েকজন লোকের ব্যাক্তিগত ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান হয়ে দাড়িয়েছে এই স্কুল দুটি।
স্কুল কমিটির সাবেক সভাপতি শাহাবুল আলম দুলালকে স্কুলের সভাপতি, বিদ্যুৎসাহি সহ নানা কায়দা করে স্কুল পরিচালনা কমিটিতে রেখেছে একটি মহল। শাহাবুল আলম দুলাল নিজের অবস্থানকে শক্তকরতে টাকার বিনিময়ে কতগুলো লোককে দাতা সদস্য বানিয়েছে রেখেছে। কর্তৃত্ব বজায় রাখতে টাকার বিনিময়ে নিজের লোকদের দাতা সদস্য বানানো হলেও সেই টাকা গুলোও স্কুল ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজেরা আত্মসাৎ করেছে।
সাবেক সভাপতি দুলাল। শিক্ষক, কম্পিউটার অপারেটর, নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগের সময় প্রায় দশ লক্ষ টাকা নিয়ে পৈত্রিক বাড়িতে দুটি ঘর দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। দুর্নীতির মাধ্যমে যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জাল বলেও অনেকে অভিযোগের সুরে বলে।
শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত হলে আসল তথ্য বেড়িয়ে আসবে। দুলাল নিজের ছোট ভাইকে অফিস কর্মচারীর পদে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। যে কারনে তাদের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির তথ্যপ্রমান খুব সহজেই মেনুপুলেট করতে পারে। কোন রকম আয় রোজগার চাকরি ব্যাবসা না করেও শুধু স্কুলের সভাপতির পদের সুবিধা নিয়ে দুলাল ধুবড়িয়া পাছপাড়ায় অবস্থিত নিজের পৈত্রিক ভিটায় দুটি বিশাল সেমিপাকা ঘড় তুলেছে এবং ঘড়ের কাঠের দরজা জানালার বানানোর জন্য স্কুল প্রাঙ্গণের গাছ কেটে নিয়েছে।
ভয়ে প্রধান শিক্ষক কোন কথা বলার সাহস পায়না। কারন, স্কুলের একাউন্ট থেকে জুয়া খেলার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় প্রধান শিক্ষকে একবার শারীরিক ভাবে লান্ছিত ও মারধর করে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান শাকিলের উপস্থিতিতে এর বিচার হয় যার রেজুলেশনের কাগজ তথ্যপ্রমাণ সবই রয়েছে।
জুয়া খেলে সাজা প্রাপ্ত হওয়া ও স্নাতক পাশ না হওয়ায় নিজে সভাপতির পদ হারিয়েও টাঙ্গাইল শহরে বসবাস রত তার নিজের ভাতিজিকে প্রতিকি সভাপতি বানিয়ে সুচতুর ভাবে নিজের হাতেই স্কুলের কর্তিত্ব ধরে রেখেছে। দুলাল কমিটির কোন পদে না থেকেও স্কুল পরিচালনা কমিটির সকল মিটিং এ উপস্থিত থাকে এবং সিদ্ধান্ত দেয়।
সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে করোনা মহামারির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে ফি নিয়ে পরীক্ষার আয়োজন তেমনই একটি সেচ্ছাচারি সিদ্ধান্ত।
দুলাল গংদের বিষয়ে বলতে যেয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের এক কর্মচারি বলেন “একবার নারগপুর শিক্ষা অফিসার স্কুলে আসেন দুজন শিক্ষক নিয়োগ দিতে, যাদের দুজনের কাছ থেকে আগেই ৫ লাখ করে ১০ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছিল চাকরি দেওয়ার নাম করে। কিন্তু স্থানীয় সংসদ সদস্য আহসানুল ইসলাম টিটু সাহেব বিষয়টি জানতে পারায়, তা আর হয়ে ওঠেনি।
স্কুলের শিক্ষক আরও বলেন ‘ এক দিকে স্কুলের কৃষিজমি নিয়ে স্থানীয় ছেলেদের বাৎসরিক লিজ দিয়ে টাকা নিয়ে খেলার মাঠ বানিয়েছে। আরেক দিকে স্কুলের নিজস্ব খেলার বিশাল মাঠ তারা ধুবড়িয়া কোহিনূর স্পোর্টিং ক্লাবকে দিয়ে রেখেছে। সেখান থেকে কোন টাকা নিচ্ছে কিনা এটি আমার পরিস্কার জানা নেই।
স্কুলের প্রাঙ্গণের ভেতর একটি বিশাল পুকুর রয়েছে যেটিকে লিজ না দিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি শাহাবুল আলম দুলাল মাছ চাষের ব্যবসা করছে। স্কুলের জমিতে একটি বাজার যেখানে আনুমানিক ১০০টি দোকান রয়েছে যার একটি টাকাও বিদ্যালয় একাউন্টে জমা হচ্ছেনা।
নিজেদের লোককে টাকার বিনিময়ে আজীবন সদস্য বানিয়ে দুই দিন পর সেই টাকা স্কুলের একাউন্ট থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ যেন হরিলুটের রাজ্য।
এই বিদ্যালয়ের এক সময়ের ছাত্র এবং ধুবড়িয়া গ্রামের বয়জেস্ঠ এক ব্যাক্তি দুঃখ করে বলেন, এই স্কুলটির ভেতর থেকে এভাবে যে ধংস করা হচ্ছে সেটি তদন্তে না আসলে জানতেই পারতাম না।
যাইহোক, আমরা এই গ্রামের সন্তান হিসেবে আশাকরবো মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপে স্কুল দুটি তার পুরোনো ঐতিহ্য ফিরে পাবে। ধুবড়িয়া ছেফাতুল্লাহ্ উচ্চ বিদ্যালয়টি স্কুল এন্ড কলেজে রুপান্তরিত হবে। প্রয়োজনে সরকারি করনের মাধ্যমেও সরকার দ্বারা বিদ্যালয়টি সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালিত হবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।