আবাদী জমি ধ্বংস করে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে চলছে মাটি বিক্রির মহোৎসব

এমরান হোসেন লিটন: ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎসবে মেতেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে কৃষিসংশ্লিষ্ট সচেতন মহল। স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরই এসব মাটিখেকো তাদের অবৈধ মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাটিখেকোদের উৎপীড়নে দিশেহারা হয়ে উঠেছে ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা।

সরেজমিনে দেখা যায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌর এলাকা সহ উপজেলার ১৫ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্পটে আবাদি জমির মাটি উত্তোলন হচ্ছে। উপজেলার একটি চক্র আছে যারা বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে অসহায় ও অতিদরিদ্রদের বিভিন্ন রকম লোভনীয় পরামর্শ দিয়ে জমির মাটি কিনে নেয়। এভাবে বিভিন্ন এলাকার মাটি বিক্রির চক্র, ইটাভাটার মালিকদের কাছে শত শত বিঘা কৃষিজমির মাটি তুলে দিয়ে আবাদি জমি ধ্বংস করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। মাটি খেকো নামে বহুল পরিচিত বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গ্রুপ রয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়।এলাকাবাসীর দাবি, মাছ চাষের কথা বলে পুকুর খনন করে শত শত বিঘা আবাদি কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতা সিন্ডিকেট। অন্যদিকে কৃষি কাজের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা মাহেন্দ্র দিয়ে মাটি আনা-নেয়ার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে কামতা এলাকার একাধিক অটোরিক্সা (সিএনজি) চালকের সাথে আলাপকালে বলেন, রাস্তাঘাট যতই ঠিক করা হোক না কেন তাতে কোন লাভ নেই, কারণ মাটি বিক্রি বন্ধ না হলে মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ হবে না। মাহেন্দ্রের কারণে পাকা সড়কের পিচ উঠে যায় ও গর্ত সৃষ্টি হয়। কাঁচা সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়, যা দেখার ও বলার কেউ নেই। ভুক্তভোগী কৃষক আব্দুর রহিম, কুদ্দুস, আব্দুস সাত্তার বলেন ফসলি জমির মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাতে তৎপর সঙ্গবদ্ধ একটি চক্র। এই চক্রের ফাঁদে পড়ে উপজেলার অনেকেই মাটি বিক্রি করেছিল। কিন্তু মাটি বিক্রি করার ফলে ওইসব জমিতে এখন আর কোনরকম ফসল হয় না। সারাবছর পানি থাকে। মাছ চাষ ও করা যায় না। এই চক্র সারাবছর ড্রেজার এবং বেকু দ্বারা মাটি বিক্রি করলেও অদৃশ্য কারনে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ দফতর সূত্রে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৩১০০ হেক্টর। যার মধ্যে এক ফসলি জমি ২৫০০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ৯১৭৯ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ১৩২১ হেক্টর। অনাবাদি জমির পরিমাণ ৩৩৭ হেক্টর। গত দশ বছরে এই উপজেলায় ১০২ হেক্টর জমি আবাদি চাষ থেকে কমে যায়। বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ বিঘা কৃষিজমি কথিত মাটি ব্যবসায়ীরা বিনষ্ট করছে। পুকুর খনন ও মাছ চাষের কথা বলে মাটি তুলছে, কিন্তু তাদের- উদ্দেশ্য মাটি বিক্রি করা।
স্থানীয়দের অভিযোগ পাশের জমি থেকে মাটি কেটে নিলে আমাদের চাষকৃত জমি ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু প্রশাসন এই বিষয়ে কোন রকম পদক্ষেপ নেয় না। বরং এসব নিয়ে আমরা মাতামাতি করলে প্রভাব শালিদের চাপের মুখে আমাদের পড়তে হয়। বিভিন্ন স্পটগুলোতে গিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমোদনের বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ফরিদগঞ্জ উপজেলা একটি বেড়িবাঁধ এলাকা। স্বাধীনতার পর পর এই বেড়িবাঁধটি তৈরি করা হয়েছিল। যার দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২ কিলোমিটার। আর এই বেড়িবাঁধটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত, কৃষিকাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার জন্য। কিন্তু প্রশাসন এবং সুবিধাবাদীদের নিজস্ব খামখেয়ালিপনা ও ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে এই বেড়িবাঁধের আসল রূপ আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title