নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গী বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালির দীর্ঘ ত্যাগ আর সংগ্রামের যে ইতিহাস তারই প্রতিচিত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন।
শনিবার গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে দর্শনার্থী বইয়ে এ বর্ণনা করেছেন মোদি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন- অধিকার, নিজস্ব সংস্কৃতি ও আত্মপরিচয়ের জন্য বাংলাদেশের মানুষের যে সংগ্রাম, বঙ্গবন্ধুর জীবন তারই প্রতিচিত্র। তার অবিনাশী চেতনা আর অদম্য সাহস কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে, বহু বাধা বিপত্তি পেরিয়ে তারা (বাঙালি) পরিণত হয়েছে বিজয়ী জাতিতে।
তিনি লিখেছেন, ভারতবাসী বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে একজন বীর হিসেবে, সেই ভারতবাসীর পক্ষে আমি ২০ শতকের এই মহান রাষ্ট্রনেতার প্রতি বিনীত শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম, যে ইতিহাসকে তিনি নতুন রূপ দিয়েছেন দৃঢ় সঙ্কল্প আর আত্মত্যাগের প্রবল শক্তি দিয়ে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী আরও লেখেন, এই ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে আমার দৃঢ় বিশ্বাস- বঙ্গবন্ধুর দিয়ে যাওয়া সাম্য, মুক্তি আর ন্যায়বিচারের চেতনা আমাদের ভবিষ্যতেও পথ দেখিয়ে যাবে।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে বঙ্গবন্ধুর সমাধি সৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
পুষ্পস্তবক অর্পণের পর নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
বঙ্গবন্ধু এবং ১৫ আগস্টের হত্যাকান্ডের ঘটনায় অন্যান্য শহিদদের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ প্রার্থনাও করা হয়। এ সময় সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোটবোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন। তারা সমাধি সৌধের বিভিন্ন অংশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ঘুরে দেখান।
এর আগে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেখ রেহানা ফুলের তোড়া দিয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল কমপ্লেক্সে নরেন্দ্র মোদিকে অভ্যর্থনা জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী সেখানে রাখা পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর এবং সেখানে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।
শনিবার বিকালে ঢাকায় দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একান্ত বৈঠক ছাড়াও প্রতিনিধি পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় আলোচিত হবে। বৈঠকের প্রান্তিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কিছু সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং কয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সমঝোতা স্মারক এবং প্রকল্প উদ্বোধনের বিষয়টি চূড়ান্তকরণের জন্য দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উভয় প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে নিজ নিজ দেশের পক্ষে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে পৃথক দুটি স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করবেন।
এছাড়া ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। সফর শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ রাতে দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দু’দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার সকালে মোদি ঢাকায় আসেন।