ইতালিতে নবনিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোঃ শামীম আহসান ইতালির রাষ্ট্রপতি সের্জিও মাত্তারেল্লা (Sergio Mattarella) এর নিকট পরিচয় পত্র পেশ করেছেন। রাজধানী রোমে অবস্থিত রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন ‘কুইরিনাল প্যালেস’ এ আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে ইতালির রাষ্ট্রপতির নিকট রাষ্ট্রদূত তাঁর পরিচয় পত্র (Letter of Credence) পেশ করেন। রাষ্ট্রদূত মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে ‘বাংলাদেশ হাউজ’ থেকে ‘কুইরিনাল প্যালেস’ এ পৌঁছালে এবং বিদায়ের সময় প্রেসিডেন্ট রেজিমেন্ট এর একটি চৌকস দল তাঁকে গার্ড অফ অনার প্রদান করে।
পরিচয় পত্র পেশ করার পর অনুষ্ঠিত একান্ত বৈঠকে ইতালির রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূতকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান এবং তাঁর দায়িত্ব পালনের সময় সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। রাষ্ট্রদূত এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এবং একই সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন।
বৈঠকের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রা সম্পর্কে রাষ্ট্রদূত ইতালির রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রদূত আরো বলেনে যে, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিস্ময়কর সাফল্যের কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে বাংলাদেশ একটি “রোল মডেল” হিসেবে সারাবিশ্বে স্বীকৃত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসাধারণ সাফল্যের বিষয়ে অবগত আছেন উল্লেখ করে ইতালির রাষ্ট্রপতি মাত্তারেল্লা আগামী দিনগুলোতে দু’দেশের সম্পর্ক আরো জোরদার করার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি ইতালীতে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের কঠোর পরিশ্রমী অভিহিত করে এদেশের অর্থনীতিতে তাঁদের অবদানেরও প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রদূত সম্প্রতি ‘ফ্লুসি ডিক্রি’-তে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য ইতালি সরকারকে ধন্যবাদ জানান। উল্লেখ্য, ‘ফ্লুসি ডিক্রি’ এর মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যবহির্ভূত দেশগুলোর নাগরিকরা ইতালিতে সিজনাল এবং নন-সিজনাল কাজের জন্য ইতালিতে আসার সুযোগ পেয়ে থাকেন। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ইতালির গঠনমূলক অবস্থানের জন্য রাষ্ট্রদূতের ধন্যবাদ জ্ঞাপনের প্রত্যুত্তরে ইতালির রাষ্ট্রপতি প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশের গভীর প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইতালি সফরকালে ২০২২ সালে দু’দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পূর্তি যৌথভাবে উদযাপনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তাতে উভয় পক্ষ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উত্তরোত্তর জোরদার ও ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রদূত আহসান ইতালির রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূতের সাথে তাঁর সহধর্মীনি পেন্ডোরা চৌধুরী, দূতাবাসের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) সিকদার মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান এবং কাউন্সেলর (শ্রম কল্যাণ) মোঃ এরফানুল হক এবং ইতালী সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পেশাদার কূটনীতিক মোঃ শামীম আহসান ইতালির আগে নাইজেরিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, রোম, নাইরোবি, দোহা এবং কুয়েতে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের বিভিন্ন পদে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাকির হোসেন সুমন
ইতালি প্রতিনিধি