হঠাৎ তিস্তায় ভাঙন, নদীগর্ভে বিলিন অসংখ্য পরিবার

লালমনিরহাট প্রতিনিধি: হঠাৎ করে তিস্তার নদীর পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না ও পাটিকাপাড়া এলাকার কয়েকশত পরিবার। কয়েকদিনের ব্যবধানে দুটি ইউনিয়নের ২১টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়াও ভাঙনের ঝুকিতে রয়েছে চর সিন্দুর্নার ঐতিহ্যবাহী চিলমাড়ী গ্রাম, কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

গত কয়েকদিনে জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত না হলেও তিস্তার পানি ওঠানামা করেছে। ২০ জুলাই তিস্তার দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে হঠাৎ পানি বেড়ে গিয়ে বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পরের দিন ২১ জুলাই ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ২২ জুলাই ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ২৩ জুলাই ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে, ২৪ জুলাই ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে। তবে পানি বাড়া কমার সাথে তীব্র হয়েছে নদী ভাঙন।

চর সিন্দুর্না এলাকার স্থানীয়রা জানান, গত তিনদিনে ৯টি বাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনের খুব নিকটে আছে সিন্দুর্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক।
ভাঙনের কবলে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া বাড়ি গুলোর মধ্যে রয়েছে সিন্দুর্না ইউনিয়নের চর সিন্দুর্না ২ নং ওয়ার্ডের বায়েজিদ, ছাবেদ ও সাইদের বসতবাড়ী। এবং চর সিন্দুর্না ১ নং ওয়ার্ডের লতিফা বেওয়া (৬৬), মজিবর রহমান (৬১), ফরিদুল ইসলাম ২৩), মিজানুর রহমান (২৬), রশিদুল ইসলাম (৪৩), মোশাররফ হোসেন (৩৫) ও বহুবার রহমান (৪৯) এর বসতভিটা। এছাড়াও ভাঙনের ঝুকিতে রয়েছে চিলমারীর ২৫০ পরিবার।

একই ভাবে পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের ১২টি পরিবার নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঐ ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল আলম সাদাত। এছাড়া বাড়ি ভেঙ্গে অন্যত্র চলে গেছে গড্ডিমারী ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার, প্রবল নদী ভাঙনের ঝুকিতে রয়েছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মুন্সীর কবর, পরিবারসহ অসংখ্য পরিবার।

চর সিন্দুর্না এলাকার আইয়ুব আলী জানান, কয়েকদিন আগে আমার বাড়ি হতে নদীর দূরত্ব ছিলো প্রায় আধা কিলোমিটার। ভাবছিলাম আরও বুঝি ৫-৭ বছর চরে বসবাস করতে পারব। এখন নদী আমার বাড়ির উঠানেই এসে পড়েছে। যেকোনো মহুর্তে শেষ সম্বল বসতভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। এখন কি করব আর কোথায় যাবো ভেবে উঠতে পারছিনা। অন্য কোথাও গিয়ে বাড়ি করে থাকব সেই সামর্থ্যও নেই।

চর সিন্দুর্না ২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রমজান আলী বলেন, নদী ভাঙনের কবলে পড়ে আমাদের ঐতিহ্যবাহী চিলমারী গ্রামটি বিলিনের পথে। তিব্র পানির স্রোতে যে ভাবে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের গ্রামটি মানচিত্র থেকে হাড়িয়ে যাবে।

গড্ডিমারী ইউনি চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল বলেন, হঠাৎ করে নদী ভাঙনের ফলে আমার ইউনিয়নের শতশত পরিবার নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। নদী ভাঙনের ভয়ে অসংখ্য পরিবার বসতভিটা ছেড়ে বাড়িঘর ভেঙে নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই মুন্সীর পরিবারসহ তার কবরটি যে কোন মহুর্তে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যেতে পারে। তবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোর নিয়মিত খোজখবর নিয়ে তাদেরকে সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করছেন বলে জানা গেছে।
সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, খবর পেয়ে ইতিমধ্যে এলাকা পরিদর্শন করে জেলা প্রশাসক মহদয়কে অবগত করেছি। আশা করছি দ্রুত সমাধান হবে।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহমেদ বলেন, খবর পাবার সাথে সাথে আমরা সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করে এসেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলোকে ত্রাণ দেয়াসহ খুব দ্রুত তাদের পুনর্বাসন করা হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title