নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি বলেছেন, বর্তমান সরকার অত্যন্ত কর্তৃত্ববাদী। সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। শান্তির মিছিল হচ্ছে, কিসের শান্তি? দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের মাঝে শান্তি নেই। মানুষের আয় বাড়ছে না কিন্তু ব্যয় বেড়েই যাচ্ছে। মানুষের মানসম্মান, সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশের মানুষ জীবন কাটাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা মানুষের কাছে প্রহসন মনে হয়।
সোমবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি সভায় সভাপতিত্ব করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
সভায় জিএম কাদের বলেন, দুটি দল দেশের মানুষের জন্য কবরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে। দেশের মানুষ কবরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় না। কারো প্রতিবাদ করার শক্তি বা সাহস নেই। এমন শান্তির জন্য আমরা রাজনীতি করি না। আমরা মানুষের সত্যিকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করছি। আগামী প্রজন্ম যেন সুনাগরিক হিসেবে শান্তিময় পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে- সরকার এমন শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেনি। শুধু ক্ষমতায় থাকা এটা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। ক্ষমতায় আমরা যাব জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য। জাতীয় পার্টি এ রাজনীতি জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায়।
তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। বর্তমান সরকার সংবিধান মোতাবেক গেল নির্বাচনের মতো এবারো একটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিএনপি এ পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে না, তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চাচ্ছে। এর ফলে দেশে একটা সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সামনের দিকে আরও খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। আমরা দুটি দলের মাঝামাঝি অবস্থানে নিজস্বতা নিয়ে রাজনীতি করছি। আমরা দেশের মানুষের সামনে তৃতীয় এবং বিকল্প অপশন সৃষ্টি করেছি। ৯০ সালের পর থেকে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে বিতশ্রদ্ধ। মানুষ একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। আমরা শক্তিশালীভাবে সাধারণ মানুষের সামনে বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি।
নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তিনি মাটি ও মানুষের লোক। আশা করছি তিনি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে পারবেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে সব দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখবেন। বিপদে-আপদে সবার পাশে দাঁড়াবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের ফলাফল যাই হোক, আমরা আবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। দেশ স্বাধীন হয়েছে দেশের মানুষের জন্য একটি দেশ হবে। দেশের প্রজাদের জন্য একটি দেশ হবে। দেশের মালিক জনগণ, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি জনগণের ইচ্ছেমতো দেশ পরিচালনা ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের জনগণ আবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করবেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে চাই। স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখতেই আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
সভায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচন হলেই নির্বাচন নিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন মানেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
তিনি বলেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনুপাতিক হারে নির্বাচনের যে ফর্মুলা দিয়েছিলেন, এখন তা সময়ের দাবি। আনুপাতিক হারে নির্বাচনে কোনো প্রার্থী থাকবেন না, নির্বাচনে শুধু প্রতীক থাকবে। প্রার্থী না থাকলে কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাস, পেশিশক্তি বা কালো টাকার ছড়াছড়ি থাকবে না। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতীকে ভোট দেবেন। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই দল থেকে তত শতাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে।
মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে। প্রতিদিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু বেকারত্ব দূর করতে কোনো উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগ ভাবছে কিভাবে ক্ষমতা ধরে রেখে আরও লুটপাট করবে। আর বিএনপি চাচ্ছে কেমন করে ক্ষমতায় গিয়ে আবার লুটপাট করবে। দেশের মানুষ আর দুটি দলের লুটপাট দেখতে চায় না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থকে মুক্তি চায়।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে সুশাসন দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে শুধু সুশাসন দিতে পেরেছে শুধুমাত্র হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। দেশে উন্নয়ন, অগ্রগতি আর শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতীয় পার্টি ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। পল্লীবন্ধু উন্নয়নের যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে এ দেশের ইতিহাসের পাতায়।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পালটাপালটি কর্মসূচিতে দেশের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। দুটি দল মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দলবাজি, টেন্ডারবাজি ও স্বজনপ্রীতি সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষ আর দুর্নীতি ও দুঃশাসন দেখতে চায় না। দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে বিকল্প শক্তি হিসেবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। জাতীয় পার্টি হচ্ছে গণমানুষের পার্টি। দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে জাতীয় পার্টির বিকল্প নেই।
জাতীয় মহিলা পার্টিতে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার আহবান জানিয়ে সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদের পর জাতীয় মহিলা পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগেই সারা দেশে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। জেলা ও উপজেলায় সম্মেলন সম্পন্ন করতে হবে।
তিনি বলেন, মা-বোনেরা জাতীয় মহিলা পার্টি করে কোনো স্বার্থ ছাড়াই। তারা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে এবং জাতীয় পার্টিকে ভালোবেসে জাতীয় পার্টি করেন। জাতীয় মহিলা পার্টি জাতীয় পার্টির প্রাণ। জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নিতে জাতীয় মহিলা পার্টিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে।
জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় মহিলা পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা আখতার এমপি, হেনা খান পন্নি, সদস্য ডা. সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, ফরিদা ইয়াসমিন, অ্যাডভোকেট লাকী বেগম, আমেনা হাসান, শারমিন পারভীন লিজা, রিতু নূর, জেসমিন নূর প্রিয়াঙ্কা, মিনি খান, মেহেরুন্নেসা হিয়া, আসমা আখতার শিল্পী, শ্রাবণী চাকমা, মনিকা আখতার, জোছনা আক্তার, অধ্যাপিকা বিলকিস সরকার পুতুল, শাহজাদি, জিন্নাত আরা, রোখসানা আখতার শ্যামলী, ফারহানা আইরিন, হাসিনা আখতার শিফা, রুনা বেগম, রোখসানা পারভীন, নাজনীন ও রাইসা।