সরকার দেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবাধিকার সুরক্ষায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর। আজ শনিবার বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ বছর বাংলাদেশ ২০২৩-২০২৫ মেয়াদের জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল (ইউএনএইচআরসি)-এর সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। আমাদের সরকারের আমলেই জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশ চারবার সদস্য নির্বাচিত হয়েছে।

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের এই ফল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবাধিকারের সুরক্ষা এবং প্রচারে বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং অঙ্গীকারের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতির সুস্পষ্ট বহি:প্রকাশ।
তিনি বলেন, এটি দেশে এবং বিদেশে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কতিপয় ব্যক্তিবর্গের দেওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার হীন উদ্দেশ্যকেও মিথ্যা প্রমাণ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের উদ্যোগে ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ পালন করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ উপলক্ষে আমি বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে বিশ্বের শোষিত-নিপীড়িত মানুষের সংগ্রামের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবছর মানবাধিকার দিবস অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্রের প্রস্তাবনায় উল্লেখিত সবার জন্য মর্যাদা, স্বাধীনতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিতের অঙ্গীকার পুনরাবৃত্তি করার লক্ষ্য নিয়ে মানবাধিকার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘মানব-মর্যাদা, স্বাধীনতা আর ন্যায়পরায়ণতায়, দাঁড়াব সকলেই অধিকারের সুরক্ষায়’ অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদেশের মানুষকে হাজার বছরের শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্যে সারাজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। তিনি এমন বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন যেখানে প্রতিটি মানুষ মানবিক মর্যাদা, সাম্য ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা লাভ করবে। এ অঞ্চলের মানুষের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন। জাতির পিতার নি:স্বার্থ সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতা লাভের মাত্র নয় মাসের মধ্যেই তিনি দেশের সকল নাগরিকের মানবাধিকার সুরক্ষার দলিল হিসেবে সংবিধান প্রণয়ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারে গণহত্যা ও নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্যে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্পৃক্ত করে বহুমুখী প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা দেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষায়ও বদ্ধপরিকর। কেননা ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করার পর খুনিদের যাতে কেউ বিচার করতে না পারে সে জন্য ‘দায়মুক্তি আইন’ করা হয়েছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পূর্বে এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে মামলা করতে পারিনি। সরকার গঠনের পর সেই কালো আইন বাতিল করে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আমরাই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এরপর থেকে আমরা সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারের ব্যবস্থা করেছি। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরাই ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন’ প্রণয়নের মাধ্যমে কমিশন প্রতিষ্ঠা করি। আমরা ইতোমধ্যে কমিশনকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। ফলে বর্তমানে কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। শৈশব, কৈশোর থেকেই শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনলাইন ভিত্তিক ‘মানবাধিকার কোর্স’ চালু করেছি। তাছাড়া, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণ প্রতিরোধে কমিশনের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ন্যাশনাল ইনকোয়ারি কমিটি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী মানবাধিকার সুরক্ষার কাজে নিয়োজিত জাতীয় মানবাধিকার কমিশনসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।

তিনি ‘বিশ্ব মানবাধিকার দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title