অনলাইন ডেস্ক: ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নের পদ্মা সেতু পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি সেতুর ৭ নম্বর পিলার থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে যান।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টার পর সড়কপথে গণভবন থেকে সরাসরি পদ্মাপাড়ে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। গণমাধ্যমকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস।
তিনি জানান, শুক্রবার ভোর সাড়ে ৬টায় গণভবন থেকে সড়ক পথে সংক্ষিপ্ত সফরে পদ্মা সেতুর উদ্দেশ্যে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আবদুল কাদের জানান, আজ সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে পদ্মা সেতুর ৭ নম্বর পিলার থেকে ১৮ নম্বর পিলার পর্যন্ত ১৬৫০ মিটার প্রায় দুই কিলোমিটার হেঁটে যান প্রধানমন্ত্রী।
পরে সকাল প্রায় ১০ টার দিকে সেতু এলাকা পরিদর্শন শেষে রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হন তিনি।
এর আগে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে সেতুতে ওঠেন প্রধানমন্ত্রী। প্রায় ৪০ মিনিট পর সেতুর জাজিরা প্রান্ত দিয়ে নামেন তিনি। পরে আবার সেতু পার হয়ে সড়ক পথে রাজধানীতে ফিরে আসেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৪ জানুয়ারি হেলিকপ্টারে করে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া থেকে ঢাকায় ফেরার পথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু বারবার তাকিয়ে দেখছিলেন শেখ হাসিনা। এসময় তিনি মোবাইল দিয়ে বেশ কিছু ভিডিও ধারণ করেন।
উল্লেখ্য, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর দূরত্ব ঘোচাতে পদ্মা নদীর ওপর সেতু তৈরির স্বপ্ন দীর্ঘদিনের। দেশের সব রাষ্ট্রনায়ক ও সরকার প্রধান এ স্বপ্নপূরণের উপায় খুঁজেছেন কিন্তু, সফল হতে পারেননি কেউ। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টি উল্লেখ করেছিল আওয়ামী লীগ। বিজয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। বিশ্বব্যাংকসহ আরও কিছু দাতা সংস্থা শুরুতে এর সঙ্গে যুক্ত হলেও কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে সংস্থাগুলো পিছু হটে যায়। কিন্তু,অদম্য সাহস ও আত্মবিশ্বাসের কারণে এই সেতু নির্মাণের স্বপ্ন থেকে এক বিন্দুও সরে আসেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
পদ্মাসেতুর অগ্রগতি সাধনে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে। দেশি-বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের কারণে বিশ্বব্যাংকসহ দাতা সংস্থাগুলো যখন এই প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দেন পদ্মাসেতু হবে নিজেদের অর্থায়নে। এরপর থেকেই পদ্মাসেতুর স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দেশের সাধারণ মানুষ। বিরোধী রাজনৈতিক মহলসহ বিভিন্ন পক্ষ এ ঘোষণাকে হেসে উড়িয়ে দিলেও নিজের সংকল্পে অটল থাকেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সাধারণ মানুষের কাছে উদাত্ত আহবান জানান তহবিল সংগ্রহে সহযোগিতার জন্যে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, সচিব, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাসহ দেশের সর্বস্তরের জনগণ ও প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে পদ্মাসেতুর তহবিলে টাকা পাঠানো শুরু করেন। ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছর থেকে বাজেটেও সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা শুরু হয়।
কথিত দুর্নীতির অভিযোগ এনে এসব বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ দাতাসংস্থাগুলো নিজেদের প্রত্যাহার করে নিতে চাইলে সরকার খানিকটা বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিল তখন। এরপর ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারি সরকার বিশ্বব্যাংকে চিঠি দিয়ে তহবিল বিবেচনার আবেদন প্রত্যাহার করার চিঠি দেয়। অবশ্য এ সময় চীন মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশ পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলেও সুবিধাজনক না হওয়ায় বাংলাদেশ তাতে আগ্রহ দেখায়নি।
২০১২ সালের ১০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু নির্দেশ দেন। ওই সময় প্রস্তুতিমূলক কাজ দ্রুত শেষ করতে নির্দেশ দেন তিনি। এরপর ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতুর কার্যক্রম শুরু করা হয় নিজেদের অর্থায়নেই।
নিজস্ব অর্থায়নে কাজ শুরুর পর সেই সেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর খবর শুনে আনন্দে কেঁদেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্য দিয়ে সব বাধা পেরিয়ে পদ্মা সেতু এখন স্বপ্ন থেকে বাস্তবে, পুরোপুরি বাস্তবায়নের পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহস ও অদম্য আত্মবিশ্বাসেই পদ্মা সেতু বাস্তবায়নে সাফল্য দেখাচ্ছে সরকার।