গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি: করোনার প্রভাবে দেশের আভ্যন্তরীণ জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়া আসতে না পারায় লিচু বিক্রি ও বাজারজাত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার লিচুবাগান ও আড়তদার মালিক সমিতি। বাজারজাত ব্যবস্থায় সুযোগ সৃষ্টি না হলে ৫০ কোটি টাকার লোকসান গুনে পথে বসতে হবে লিচু চাষিদের।
লিচুর রাজ্যখ্যাত উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের কানু মোল্লার বটতলায় অবস্থিত লিচুর আড়তে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এমন হতাশা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার কথা জানালেন লিচুচাষি ও আড়তদার মালিক সমিতি।
লিচু চাষি ও আড়তদার মালিক সমিতির পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন লিচু আড়তদার মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম। তাঁর বক্তব্যে তিনি দাবী করেন উপজেলার মধ্যে নাজিরপুর ইউনিয়ন জুড়ে বানিজ্যিকভাবে লিচুর আবাদ বেশি। তাছাড়া পাশের সিংড়া ও বড়াইগ্রাম উপজেলাতে লিচু আবাদ হয়। ভৌগলিক কারনে এই আড়তের মাধ্যমে ট্রাকে করে লিচু ছড়িয়ে পড়ে দেশ্যব্যাপী। অনেকে আবার বাগান থেকেও লিচু কিনে ট্রাকে করে নিয়ে যান।
কিন্তু এবছর করোনার প্রভাবের কারনে দেশের আভ্যন্তরীণ জেলা থেকে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়ার আসতে না পারায় বাগানের লিচু বিক্রি হয়নি। জমে উঠেনি লিচুর আড়তও। একারনে লিচুর বাজারজাত ও ন্যায্যমুল্য পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন লিচুচাষি ও আড়তদাররা।
আড়তদার সমিতির যুগ্মসাধারন সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ভরা মওসুমে দিনে লিচুর ও বাগান মিলিয়ে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০ ট্রাক করে লিচু ছড়িয়ে পড়ে দেশ্যব্যাপী। প্রতি ট্রাকে গড়ে ৪-৫ লাখ টাকার লিচু থাকে। সে হিসেবে তিন সপ্তাহের মওসুমে গড়ে ৮০ কোটি টাকার লিচু বেচাবিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু এবছর ক্রেতার অভাবে লিচু ব্যবসায় ধসনামার শঙ্কা দেখছেন লিচু সংশ্লিষ্টরা। একই সাথে প্রায় ৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে।
লিচু চাষি রজব আলী আব্দুল মাজেদ রেজাউল করিমসহ কমপক্ষে ২০জন চাষি বলেন,- লিচুকে ঘিরে এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকা। একারনে ধারকর্জ করে বাগান পরিচর্যা করে থাকেন তাঁরা। লিচুর মওসুম শুরু হওয়ার ৪-৩ মাস আগেই বাগান বিক্রি করে থাকেন তাঁরা। কিন্তু এবছর করোনার কারনে মহাজন, ব্যাপারী ও ফড়িয়া আসতে না পারায় একটি লিচুরবাগানও বিক্রি হয়নি। জমে উঠেনি লিচুর আড়ত। লিচুরবাজারজাতের সুযোগ চেয়ে প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেন লিচু চাষিরা।
সাংবাদিক সম্মেলন সভাপতিত্ব করেন আড়তদার মালিক সমিতির পক্ষে লিচু চাষী শিক্ষক মো. মোজাম্মেল হক। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিতি ছিলেন মো. মোত্তালেব সরদার মো. আশরাফুল ইসলাম তালুকদার ও মো. আসাদুজ্জামান প্রমূখ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম জানান,- উপজেলা ৪১০ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হচ্ছে। এখান থেকে ৩ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন লিচুর উৎপাদন হবে। যা বাজার মুল্য ৫০ কোটি টাকারও বেশি। লিচু বাজারজাত করার জন্য লিচু চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
কৃষি কর্মকর্তা আরো জানান, গেলবছর তাপমাত্রায় লিচুর চামড়া পুড়ে নষ্ট হলেও এবছর অনুকুল আবহাওয়ায় লিচুর আকার আকৃতি বড় হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ব্যাপারী, পাইকার ও ফড়িয়া আসতে না পারা এবং বাজারজাত সমস্যার কারনে লিচু চাষিদের কপাল পুড়তে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।