র‍্যাব’র সাবেক ও বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রাইম টিভি বাংলা, অনলাইন:

র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) এবং এর সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালকসহ সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার দেশটির অর্থ দপ্তর থেকে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্র গতকাল বিশ্বের ১৫ জন ব্যক্তি ও ১০টি বাহিনী/প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের সম্পদ থাকলে বাজেয়াপ্ত হবে। তাদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লেনদেন ও যোগাযোগ রাখতে পারবে না।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম হলেন র‍্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। বেনজীর আহমেদ ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর গতকাল পৃথকভাবে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ’ তুলে বেনজীর আহমেদ ও র‍্যাব-৭-এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ কাউন্সিলর ইকরামুল হককে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যায়’ জড়িত।

মার্কিন অর্থ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া অন্য কর্মকর্তারা হলেন র‍্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) খান মোহাম্মদ আজাদ, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) তোফায়েল মুস্তাফা সারোয়ার (জুন ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২১), অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে জুন ২০১৯) ও মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (এপ্রিল ২০১৬ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞপ্তিটি আমি দেখিনি। দেখার পর প্রতিক্রিয়া জানাব।’

অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে’ র‍্যাবকেই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের মাদকবিরোধী যুদ্ধের সময় সংস্থাটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে বলে অভিযোগ তোলা হয়। তাদের এই কাজ বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, মৌলিক স্বাধীনতা, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও আইনের শাসনকে অবমূল্যায়ন করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর বলেছে, এনজিওগুলো অভিযোগ করছে, র‍্যাব ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে গুমের ঘটনায়ও দায়ী।

র‍্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গত বছর অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে ১০ জন মার্কিন সিনেটর চিঠি দিয়েছিলেন। গত আগস্ট মাসে যুক্তরাজ্যের ‘গুয়ের্নিকা ৩৭ চেম্বার’ র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তরে আবেদন জানায়।

মার্কিন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গত বৃহস্পতিবার ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে বিভিন্ন দেশের সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যক্তিবিশেষের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের উত্সাহিত করছে। গণতন্ত্র সম্মেলনের আগে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া, ইরান, উগান্ডাসহ কয়েকটি দেশের নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া শুরু করে। দুই দিনের গণতন্ত্র সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র দেশগুলোর কাছ থেকেও এ ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রত্যাশা করেছে। মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নেওয়া উদ্যোগগুলো সাধারণত কানাডা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া অনুসরণ করে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title