মোঃনবী আলম, চারঘাট (রাজশাহী) প্রতিনিধিঃ রাজশাহী চারঘাট উপজেলার ৫নং চারঘাট ইউনিয়ন এর ৬নং ওয়ার্ড বেলতলী বাজার সংলগ্ন এলাকায় ৭ বছরের পঙ্গুত্ব জীবন নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন জিনারুল (৩৮) নামের এক যুবক।
জানাযায়, অবহেলার আরেক নাম মৃত্যু কারণ অবহেলা থেকেই মানুষ মৃত্যুর দরজায় হেলে পড়ে, তবে সেই মৃত্যুও যদি স্বাভাবিক না হয় তবে আর কি বা করার থাকে?
আজ বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) এমন এক ব্যক্তি শোনালেন তার জীবনের গল্প, যিনি প্রায় ৭ বছর ধরে পঙ্গুত্ব আর অবহেলা নিয়ে বেঁচে আছেন। ৩৮ বছর বয়সী এই যুবকের বাবার নাম মৃত নইমুদ্দিন বিশ্বাস ও মাতা জোহুরা বেওয়া।
নিজ বাড়ি চারঘাট পৌর এলাকার মিয়াপুর গ্রামে। তবে বাবা মারা যাওয়ার পর আর থাকা হয়নি নিজ বাড়িতে মা সহ চলে আসেন নানার বাড়ি চারঘাট ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড এলাকার বেলতলি গ্রামে। এর পরে আর্থিক ভাবে অসচ্ছল নানার বাড়িতে কোন রকমে দিন পার করতো তারা, এমন সময়েও দেখেন সংসার করার স্বপ্ন, বিয়ে করেন তিনি অতপর মা আর বউ নিয়ে ভালোই চলছিলো সংসার।
তবে ২০১৩ সালটা কাল হয়ে দাঁড়ালো আজকের গল্পের নায়ক ও মৃত্যুপথযাত্রী জিনারুলের জীবনে। বছরের প্রথম দিকে এক সড়ক দুর্ঘটনায় অচল হয়ে পড়ে পা দুটো। সংসারে নেমে আসে ঘন অন্ধকার।
এক দিকে পৃত্রীহীন জীবনের ব্যথা অন্য দিকে হতদরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ, আবার সাথে যুক্ত হলো পঙ্গুত্ব। অভাবের সংসার ফেলে চলে গেলো সারা জীবন এক সাথে থাকার প্রত্রিশ্রুতি দেওয়া বউ। শুরু হল অবহেলার জীবন। তবে জন্মদাতা মা ফেলতে পারেনি তার সন্তানকে। শত বঞ্চনা সহ্য করেও মা তার বুকের ধনকে আগলে রেখেছিলো ৩ টি বছর।
এক পর্যায়ে আত্মীয়-স্বজনদের চাপে ও পরিস্থিতির শিকার হয়ে দূরে ঠেলে দিয়েছে জন্মদাতা নিরুপায় মা। সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হওয়ার কারণে চলাফেরা ওঠা-বসা করতে না পারা জিনারুলকে ২০১৬ সালের মাঝামাঝি সময়ের দিকে বাড়ি থেকে দূরে রাস্তার পাশে গাছের নিচে বাধ্য হয়েই ফেলে রেখে যান জনম দুখিনী মা।
জগত সংসারে কোন আত্মীয়-স্বজন এখন জিনারুলের খোঁজ খবর না রাখলেও এখনো শত কষ্টের মাঝে ৩ বেলা খাবার পৌঁছে দেন তার মা জোহুরা বেওয়া। খোলা আকাশের নিচে ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে জীবন চলতে থাকে জিনারুলের। এক পর্যায়ে স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষকের উদ্যোগে ও এলাকা বাসির সহযোগিতায় মেলে দুটি টিন, চার টুকরা বাঁশ ও একটি চৌকি, রাস্তার পাশে তৈরি হয় গল্পের নায়কের বর্তমান আবাসস্থল। আর জিনারুল ও তার মায়ের আয় বলতে প্রতিবন্ধী ভাতার একটি কার্ডের অতি সামান্য কিছু টাকা।
এত কষ্ট, অবহেলা, অবজ্ঞার মাঝে কিভাবে বাঁচতে পারে একজন মানুষ? বাকি জীবনের চাওয়াটাই বা কি? জানতে চেয়েছিলাম জিনারুলের কাছে। সে বলেন, ৭ বছরের পঙ্গুত্ব জীবনে এখন চাওয়া একটাই, সে বাড়ি ফিরতে চাই। আর যে কটাদিন বেঁচে আছে মায়ের সাথে এক বাড়িতে থাকতে চাই।
সে আরো বলে, আমাকে যদি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন, মায়ের সাথে থাকার সুযোগ করে দেন তাহলে আমি বাড়িতেই থাকতে চাই এভাবে জীবনযাপন করা খুব কষ্টদায়ক। আমি আর পারছিনা এভাবে থাকতে।
গ্রামবাসীরা জানান, প্রায় ৭ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যাওয়া জিনারুল ৪ বছর ধরে এই রাস্তার ধারে বাস করছেন, দেখার মত কেউ না থাকায় রোদ বৃষ্টিতে ভিজে দিন পার করছেন সে, তবে এমন এক অসহায়ের পাশে যদি জনপ্রতিনিধি ও সমাজের বিত্তবান রা এগিয়ে আসে তাহলে বাকি দিনগুলো সুখে কাটাতে পারত জিনারুল।
এ বিষয়ে চারঘাট উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা ও ৫নং ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে যোগাযোগ করা হলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সহযোগিতার কথা বলেননি তারা, এমনকি জিনারুল এর মতো কাউর কথাও তাদের জানা নেই।
অপর দিকে জিনারুলের এক মানবিক আবেদন মন কেড়েছে এই গণমাধ্যম কর্মীর, তার দাবি মায়ের কাছে তাকে ফিরিয়ে দিয়ে দু-মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেওয়া। তবুও মৃত্যুটা স্বস্তির হত।