নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজনীতির বাইরে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বাঁচাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজ সাবেক প্রধানমন্ত্রী জীবনমৃত্যুর সঙ্গে সংগ্রাম করছেন। তার চিকিৎসার ব্যাপারে এভারকেয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। তাকে অসুখগুলো থেকে সারিয়ে তোলার মতো তারা পুরোপুরি ইকুইপ্ড নন বলে জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন এবং বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর দাবিতে আগামীকাল শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা-মহানগরে আট ঘণ্টার গণঅনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিবের এ কর্মসূচি ঘোষণা করার কিছু সময় আগে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পৃথকভাবে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জ্বালানি তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি ও গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিতব্য মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে। তার পরিবর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ওই দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালিত হবে। দলের একই কর্মসূচি একই দিন দুই কার্যালয় থেকে ঘোষণা দেওয়ায় বিএনপির আভ্যন্তরীণ সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করছেন নেতাকর্মীরা।
গুলশানের সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার দাবিতে শনিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে এবং সব জেলা-মহানগরে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করবেন তারা। ওইদিন সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
রাজধানী ঢাকার ভেন্যু সম্পর্কে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ঢাকায় কোথায়ও ভেন্যু পাওয়া না গেলে আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কর্মসূচি পালন করব।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া জীবনমৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের সবচেয়ে প্রিয় নেতা। সুস্থতার জন্য তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হবে না- এটা অমানবিক। আমরা অনতিবিলম্বে তার জীবন রক্ষার জন্য তাকে বিদেশে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, শামসুজ্জামান দুদু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, জহির উদ্দিন স্বপন, আমিনুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়া বিভিন্ন রকম অসুখে আক্রান্ত হয়েছেন। এই অসুখ এমন পর্যায় পৌঁছেছে যে, তাকে বাইরে চিকিৎসা করাটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে বিদেশে পাঠালে তিনি সুস্থ হবেন।
মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ওই সভায় তিনি বলেন, একথা বারবার বলা হচ্ছে। আজকে অন্য দলগুলো বলছে, সবাই বলছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেত্রী সম্পূর্ণভাবে সেটাকে গ্রহণ করছেন না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আবারও বলছি, আবারও আহ্বান জানাতে চাই যে, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন তার জীবন রক্ষার্থে। এর সঙ্গে রাজনীতিকে নিয়ে আসবেন না।
নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, জীবনমৃত্যু তো আল্লাহর হাতে। আমাদের নেত্রীকে বাঁচানোর জন্য, সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করার জন্য প্রয়োজনে জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করব। আসুন সেভাবে আমরা প্রস্তুতি নিই, সেভাবে আমরা কাজ করি।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও মওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও কমিটির সদস্য এসকে সাদীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, শওকত মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।