নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাসে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কোনো বাসে এই টিকিট দেওয়া হয় না। টিকিট কাটার বিড়ম্বনা এড়াতে গড়পড়তা যাত্রীরা এ নিয়ে মাথা ঘামান না। ফলে এসব বাসে ই-টিকেটিংয়ের প্রচলন থাকলেও বাস্তবে তা নেই।
রাজধানীর সদরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করার কথা ভিক্টর ক্লাসিক বাসের, যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পর থেকে। তবে যাত্রীকে গুনতে হচ্ছে সাদরঘাট পর্যন্ত ভাড়া। ফিরতি পথেও একই অবস্থা। যাত্রী নামবেন ভিক্টোরিয়া পার্ক, ভাড়া দেবেন সদরঘাটের। শুধু ভিক্টর ক্লাসিকেরই এ অবস্থা নয়, বিহঙ্গ পরিবহন, আকাশ পরিবহনসহ সদরঘাট থেকে যাত্রা শুরু করা সব বাসের এক দশা। এর মধ্যে নতুন অনিয়ম যোগ হয়েছে ই-টিকিট না থাকা। রাজধানীতে ই-টিকিটের প্রথম যাত্রা মিরপুরকেন্দ্রিক হলেও আপাতত শেষ ধাপ সদরঘাট-গুলিস্তানকেন্দ্রিক।
গত শনিবার গুলিস্তানে প্রায় ৩০টি বাসে সরেজমিনে ঘুরে একটি বাসেও যাত্রীর কাছ থেকে টিকিট দিয়ে ভাড়া আদায় করতে দেখা যায়নি। এমনকি অনেক যাত্রী জানেনও না যে ভাড়ার বিনিময়ে লোকাল বাসে তিনি টিকিট পাবেন। কন্ডাক্টরের দিক থেকেও যাত্রীর টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। যদিও বেশির ভাগ বাসের ভেতর জানালার গায়ে যাত্রীদের উদ্দেশে লেখা রয়েছে—টিকিট ছাড়া ভাড়া দেবেন না।
গুলিস্তান থেকে বাড্ডার পথে নিয়মিত যাতায়াত করেন ইমরান আহাম্মেদ। তিনি বলেন, ‘একদিনও কন্ডাক্টর আমাকে টিকিট দেয়নি। টিকিট যে চালু হয়েছে, এটাও জানি না। অন্য যাত্রীদেরও টিকিট দিতে দেখিনি।’
কথা হয় আকাশ পরিবহনে ভাড়া আদায়ের দায়িত্বে থাকা জালাল মিয়ার সঙ্গে। তিনি স্পষ্ট কোনো জবাব না দিয়ে বলেন, ‘যাত্রী চাইলে টিকিট দিই। সব সময় মেশিন গলায় ঝুলিয়ে রাখা যায় না।’
ঢাকা শহর ও শহরতলির সড়কপথে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধে গত বছরের ১৩ নভেম্বর নতুন করে ৩০টি প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৬৪৩টি বাসের মধ্য দিয়ে ই-টিকেটিং ব্যবস্থা চালু হয়। দ্বিতীয় ধাপে চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি আরো ১৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭১৭টি বাস এর আওতায় নিয়ে আসে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।
সমিতির দাবি, এই ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ বাসেই ই-টিকেটিং পদ্ধতি পুরোপুরি কার্যকর হয়েছে। টিকিটে কিলোমিটার উল্লেখ থাকে না, যাত্রীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে সব সড়কপথের টিকিটে ধীর ধীরে কিলোমিটার যুক্ত করা হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১ মার্চ থেকে ই-টিকেটিংয়ের আওতায় আরো ১৩টি পরিবহন প্রতিষ্ঠানের ৯৪৭টি বাস যুক্ত করা হয়। বর্তমানে সব মিলিয়ে মোট ৫৯টি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার ৩০৭টি বাসে ই-টিকিটের প্রচলন থাকার কথা।
রামপুরায় রাইদা বাসের যাত্রী মো. হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাসওয়ালাদের সঙ্গে চিল্লাইতে ভালো লাগে না। টিকিট চাওয়া মানে পাঁচটা কথা কওয়া। সরকার না চাইলে এমন অনিয়ম বন্ধ হবে না।’
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সূত্র বলছে, টিকিটে দূরত্ব অনুযায়ী দূরত্ব উল্লেখ নেই এটা সত্য। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) কিলোমিটার উল্লেখ করে ভাড়ার তালিকা তৈরি করার জন্য বলা হয়েছে। গত বুধবার বিআরটিএর সঙ্গে বাস মালিক-শ্রমিক নেতারা বৈঠক করেছেন। সেখানে ঢাকার ৪৬টি বাসস্টপেজের দূরত্ব নতুন করে মাপার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু রুটের বাস টিকিটে দূরত্ব যুক্ত করা শুরু হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে চেষ্টার কমতি নেই। আমরা চাই টিকিটের মাধ্যমে ভাড়া আদায় হোক, কিন্তু কতক্ষণ মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা যায়? যাত্রীদের সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই। যাত্রীরা যদি বলেন টিকিট ছাড়া ভাড়া দেবেন না, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যায়।’
২০১২-১৩ সালে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) বাসে প্রথম ই-টিকেটিং ব্যবস্থার প্রচলন করে। তখন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে র্যাপিড পাসের মাধ্যমে ই-টিকিটে ভাড়া আদায় শুরু হয়। যদিও দীর্ঘ মেয়াদে এই ব্যবস্থা সফলতার মুখ দেখেনি। নতুন করে ঢাকা সড়ক পরিবহন বাস মালিক সমিতি আবার ই-টিকিটং প্রথার প্রচলন করেছে।
এবার বিআরটিসির বাসে ই-টিকিট নেই। রাজধানীর যেসব রুটে বিআরটিসির বাস চলছে, সবখানেই প্রচলিত প্রথায় ভাড়া আদায় হচ্ছে। কিছু জায়গায় ছাপা টিকিটের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে টিকিটে লেখা ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটছে।
মো. সুমন রহমান নামের এক যাত্রী নিজের হাতের টিকিট দেখিয়ে অভিযোগ করেন, মোহাম্মদপুর থেকে গুলশান ১ নম্বর পর্যন্ত ভাড়া ২৪ টাকা। এটা টিকিটের গায়ে লেখা আছে। তবে সেটা কেটে দিয়ে হাতে ৪০ টাকা লিখে ভাড়া আদায় করছে।