নিজস্ব প্রতিবেদক: যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা, ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে মুসলমানদের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়েছে।
মহান আল্লাহর অপার অনুগ্রহ লাভের আশায় ঈদের জামাত শেষে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী পশু কুরবানি করেছেন। নামাজ শেষে মুসল্লিদের অনেকেই কবরস্থানে ছুটে গেছেন। চিরবিদায় নেওয়া তাদের স্বজনদের কবরের পাশে দাঁড়িয়ে অশ্রুসজল চোখে এই আনন্দের দিনে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে আকুতি জানান।
ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীসহ বিশ্বের সব মুসলমানদের আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
গতবারের মতো এবারো করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদ উদযাপন করছেন মুসলমানরা। পশু কুরবানির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করতে বলা হয়েছে।
এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত ঈদের এই প্রধান জামাতে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস নামাজ আদায় করেন।
ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, এবার কিশোরগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। এই ঈদ জামাত প্রতিবছরের মতো এবারো বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করতে ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৭টা থেকে পর্যায়ক্রমে জামাতগুলো অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম জামাত সকাল ৭টায় অনুষ্ঠিত হয়। এই জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা এহসানুল হক। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম আব্দুল হাদী।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় অনুষ্ঠিত হয়। ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মুহীউদ্দিন কাসেম। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের মুয়াজ্জিন (অব.) হাফেজ কারি মো. আতাউর রহমান।
তৃতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ৯টায়। ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের প্রধান খাদেম মো. শহিদ উল্লাহ।
চতুর্থ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক মাওলানা মো. আনিসুজ্জামান সিকদার। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. রুহুল আমিন।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল পৌনে ১১টায়। এতে ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। মুকাব্বির ছিলেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খাদেম হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম।
সারা দেশে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ এবং সরকারি সংস্থাগুলোর প্রধানরা জাতীয় কর্মসূচির আলোকে নিজ নিজ কর্মসূচি প্রণয়ন করে ঈদ উদযাপন করেন।
ঈদ উদযাপন উপলক্ষ্যে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশু সদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোতে যথাযথভাবে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করছে। এ উপলক্ষ্যে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষার্থে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)’কে কুরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।কিন্তু পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আ’লামিনের অপার কুদরতে হযরত ইসমাইল (আ.)’এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কুরবানি হয়ে যায়। হযরত ইবরাহীম (আ.)’এর ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কুরবানি করে থাকে।
আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান মুসলিমের জন্য মহান আল্লাহ কুরবানি ওয়াজিব বা অপরিহার্য করে দিয়েছেন। এ জন্য ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে কুরবানি করাই এদিনের উত্তম ইবাদত। সেই ত্যাগ ও আনুগত্যের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে সারা দেশের মুসলিম সম্প্রদায় আজ দিনের শুরুতেই মসজিদে সমবেত হন এবং ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করেন। নামাজের খুতবায় খতিব কুরবানির তাৎপর্য তুলে ধরেন। তবে এবার করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বমন্দা পরিস্থিতিতে ভিন্ন পরিবেশে কুরবানির ঈদ হওয়ায় অন্যান্যবারের চেয়ে পশু কুরবানি কিছুটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা উদযাপিত হলেও পরের দুই দিনও পশু কুরবানি করার বিধান রয়েছে। সামর্থ্যবান মুসলমানদের জন্য কুরবানি ওয়াজিব হলেও ঈদের আনন্দ থেকে দরিদ্র-দুস্থরাও বঞ্চিত হননি। কুরবানির পশুর চামড়া বিক্রির সমুদয় অর্থ এবং কুরবানি দেওয়া পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ তাদের মধ্যে বন্টন করে দেওয়া হয়।