নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কভিড-১৯ মহামারি আমাদেরকে ইতিহাসের এক চূড়ান্ত পথে নিয়ে এসেছে এবং সম্ভবত আমাদের সময়ের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মহামারীর আর্থ-সামাজিক প্রভাব ব্যাপক এবং এই প্রভাব এখনও বাড়ছে। সুতরাং সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজ মঙ্গলবার ‘বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া’ (বিএএফ)‘র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ধারণকৃত ভাষণে এই আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবন ও জীবিকার ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ মহামারীর বিরূপ প্রভাব কাটানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১৪ দশমিক ছয় বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, যা আমাদের জিডিপির চার দশমিক চার শতাংশ।
তিনি বলেন, কেউ যাতে পেছনে না থাকে, এমনকি মহামারি সংকটেও যাতে কেউ পেছনে না থাকে, তা নিশ্চিত করতে বৈশ্বিক গভর্নেন্সের ভ‚মিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্যে বিশ্বাস করে।
কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় পারস্পরিক শক্তিশালী অংশীদারিত্বের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বিশ্বজনীন পণ্য হিসেবে ঘোষণা করা উচিত। সার্বজনীন ভ্যাকসিন কাভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী দেশগুলোর উচিত অন্য দেশগুলোকে ভ্যাকসিন উৎপাদনে সহায়তা করা।
তিনি বলেন, ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য চিকিৎসা উপকরণের চাহিদা মেটাতে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে কার্যকর করতে সকল দেশের এক সঙ্গে কাজ করা দরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জিএভিআই এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে অবশ্যই সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অধিকার, সাম্য এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
সংকটময় সময় কাটিয়ে উঠতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই সংকটময় সময়ে উন্নয়শীল দেশগুলোর জন্য আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বহুজাতিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর তহবিল হতে উন্নয়নশীল দেশগুলোর আরও বেশি সহায়তা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক, বিমসটেক, এসএএসসি, বিবিআইএন এবং বিসিআইএমের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিভিন্ন আঞ্চলিক উদ্যোগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং এর বাইরেও বহু মাল্টি মডেল লিংকেজের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বাংলাদেশ বিশ্বাস করে বৈশ্বিক গভর্নেন্স শক্তিশালী করায় এবং অ্যাডভান্স বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখতে পারে।
ঐক্যবদ্ধভাবে প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মহাদেশে বিপুল জনসংখ্যা, বিশাল বাজার এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ হই, আমরা একসঙ্গে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারি। এটি আমাদের প্রতিশ্রুতি এসডিজি অর্জনেও সহায়তা করবে।
প্রযুক্তি সহযোগিতা বিনিময় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে আমাদের সর্বোচ্চ প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা বাড়ানো দরকার। হাই-টেক পার্ক, ব্রডব্যান্ড এবং স্যাটেলাইট সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ একটি উল্লেখযোগ্য কাঠামো তৈরি করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমরা আমাদের তরুণদের উদ্ভাবনের জন্য প্রস্তুত করছি। এক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে সুবিধাগুলো বিনিময়ের মাধ্যমে পাশাপাশি আমরা সাইবার অপরাধসহ অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে পারি।