নিজস্ব প্রতিবেদক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, কারো একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সরকারি দল, বিরোধী দল ও সুশীল সমাজসহ প্রত্যেকের সহযোগিতাও দরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা জ্বালাও-পোড়াও চাই না। যে কারণে আমরা বিশ্বাস করি, জ্বালাও-পোড়াও দলগুলো একটু সচেতন হবে। জ্বালাও-পোড়াও আর রাস্তা দখল করে আন্দোলন কমে যাবে। তারা যদি আইনানুগ কোনো আন্দোলন করে, তাহলে সরকার তাদের অ্যাকোমোডেট করতে খুবই আগ্রহী।’
বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু মানুষকে অতিষ্ঠ করে, সরকারি-বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস করে, গতবার তারা তিন হাজার ৮০০টি গাড়ি ও ২৭টি রেলবগি জ্বালিয়েছে, আমরা তা চাই না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণতান্ত্রিক নিয়মে দেশ পরিচালনা করছেন বলেই দেশে উন্নতি হয়েছে, গড় আয়ু বেড়েছে। জনগণের প্রতি আমাদের বিশ্বাস আছে।
মার্কিন ভিসা নীতিকে কোনো বাড়তি চাপ মনে করছে না বাংলাদেশ, দাবি করেন আব্দুল মোমেন। অনেক আগ থেকেই আপনারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে আসছেন। তারপরও কেন এই ভিসা নীতি আসছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুষ্টু লোকরা দেখেন না এখনো জ্বালা-পোড়াও করে। গতকালকে (বুধবার) পুলিশকে পিটিয়েছে। তারপরে বাস জ্বালিয়েছে। এই ভিসা নীতিতে তারা একটু সাবধান হবে।’
কাজেই যুক্তরাষ্ট্রের এ ভিসা নীতি বাংলাদেশের অবস্থানকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আব্দুল মোমেন।
‘মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে, তা অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়াকে আরও জোরালো করেছে।’
সম্প্রতি বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেদের নীতি নির্ধারণ করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে তো আর গুজব রটনাকারীর অভাব নেই। তাই বিভিন্ন রকম বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। যে বক্তব্য তারা (যুক্তরাষ্ট্র) দিয়েছেন, সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেটা চাচ্ছেন, সেটিকে আরও জোরালো করেছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই এ দেশের গণতন্ত্রের ধারক ও বাহক। এ দেশে গেল ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার আছে বলেই একটি গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া চলছে। হাজার হাজার নির্বাচন হচ্ছে এবং নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকার এসেছে। কিন্তু ২০০৮ সালের আগে যদি দেখেন, যারা ভোটারবিহীন নির্বাচনে জয়লাভ করেছে, তাদের কিন্তু এ দেশের মানুষ গদিতে রাখেনি, কয়েক দিন পর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
‘আওয়ামী লীগ সবসময়ই জনগণের ওপর বিশ্বাস রাখে, জনগণের ভোটের মাধ্যমেই তারা ক্ষমতায় আসতে চায়।’
উল্লেখ্য, বুধবার (২৪ মে) রাতে এক টুইটবার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশের বিষয়ে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেন।
ব্লিঙ্কেন বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অভিবাসন ও জাতীয়তা আইনের ধারায় একটি নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করছি। এ নীতির অধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ণ করার জন্য যারা দায়ী বা জড়িত থাকবে, সেসব বাংলাদেশির ভিসা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এর আওতায় বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা পরিষেবার সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে এ সিদ্ধান্তের কথা জানায় বলেও উল্লেখ করেন ব্লিঙ্কন। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজের মধ্যে রয়েছে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারে বাধা দেওয়া এবং নানা প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রচার করা থেকে বিরত রাখা।