মামুনুর রশিদ: ফেনসিডিল ও হেরোইন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় ফরিদপুরের ভাঙ্গায় রিজু নামে উপজেলা যুবলীগের এক নেতাকে ধারালা অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুরুত্বর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত যুবলীগ নেতা ভাঙ্গা পৌরসভার কমিশনার বাচ্চু মিয়ার ছেলে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মাগরিব নামাজের পর পৌরসভার গজারিয়া গ্রামের একটি দোকানের সামনে থেকে যুবলীগের ওই নেতাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ঘটনার পর থেকে গোটা এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করায় গজারিয়া গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ঘটনা নিশ্চিত করে ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আকরামুজ্জামান রাজা জানান, রিজু স্থানীয় যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার পিতা কমিশনার বাচ্চু মিয়া এলাকায় দীর্ঘদিন মাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় প্রতিবাদ করে আসছিল এবং সম্প্রতি ভাঙ্গা থানায় একটি বিশেষ অভিযোগ দায়ের করার ঘটনার সূত্র থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের রোষানলে ছিলেন পিত-পুত্র দুজন। সেই সুত্রয়ায় যুবলীগ নেতা রিজুর উপর বর্বচিত হামলা করা হয়েছে এবং নির্মমভাবে কুপিয়ে আহত করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, সম্প্রতি গজারিয়া এলাকায় রাজনৈতিক প্রভাব ঘাটিয়ে কিছু লোকজন মাদক বিক্রেতাদের মদদ দিয়ে আসছিল। এলাকার কমিশনার ও আওয়ামীলীগ নেতা হিসাবে বাচ্চু মিয়ার পরিবার মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় পিতা ও পুত্রের প্রতি চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে গজারিয়া গ্রামের অনেকেই। অপরাধী চক্রটি বিভিন্নভাবে যুবলীগ নেতা রিজুসহ তার পরিবারের সদস্যদের ক্ষতি সাধন করতে সুযোগ খুঁজতে থাকে।
এছাড়াও গ্রাম্য দলাদলি নিয়ে একই গ্রামের বিবদমান দুটি গ্রুপের কমিশনার বাচ্চু মিয়ার পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন আধিপত্য নিয়ে দলাদলি চলে আসছিল। দুদিন আগে গজারিয়া গ্রামের ইসমাইল নামে এক যুবককে মাদক ব্যবসার অভিযোগে ফরিদপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গ্রেপ্তার করে। ওই গ্রেপ্তার ঘটনায় রেশ ও পূর্ব শত্রু থেকে কমিশনারের পুত্র রিজুর উপর মঙ্গলবার রাতে চাইনিজ কুড়াল, রামদাসহ অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এসময় রিজু স্থানীয় একটি দোকান ঘরে দাড়িয়েছিল এবং সে কিছু আচ করার আগেই দুর্বৃত্তরা এলোপাথারিভাবে কুপিয়ে তাকে রক্তাত্ত করে ফেলে পালিয়ে যায়।
ঘটনাটি রিজুর বাড়ির নিকটবর্তী হওয়ায় তার পরিবারের লোকজন ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় স্থানান্ত করছে বলে জানান ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগ নেতা সালমান মুন্সী।
এই বিষয়ে যুবলীগ নেতা রিজুর পিতা কমিশনার বাচ্চু মিয়া কান্নাজরিত কণ্ঠে জানান, আপনারা আমার ছেলের জন্য সবাই দোয়া করবেন। সরকারের কাছে আমার একতাই দাবী মাদকের বিরুদ্ধে আমার পরিবার অবস্থান নেওয়ায় যারা আমার ছেলেকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে আহত করেছে সেই সকল অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক। আমি আর কিছু বলতে পারছি না বলতেই ছেলের জন্য কান্নায় তিনি ভেঙ্গে পড়েন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে ভাঙ্গা থানা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গাজী রবিউল ইসলাম লিড-নিউজ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা খবর পেয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সকল পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অপরাধীদের সনাক্ত করার পাশাপাশি তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তবে পলাতক থাকায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায় নি। পুলিশের অভিযান অব্যহত রয়েছে উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। রিজু পরিরারের থেকে এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাওয়া না গেলেও অপরাধীদের সনাক্ত করতে ও আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করছে পুলিশ।