বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ঘামানো উচিত নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: দক্ষিণ এশিয়ায় ‘গণতন্ত্র সুসংহত’ করতে সর্বশেষ মার্কিন উদ্যোগ দেখা গেছে বাংলাদেশে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ঘোষণা দিয়েছেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে হবে। অনেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রসহ চারটি দেশের কূটনীতিকের ওপর থেকে পুলিশ প্রটোকল তুলে নেওয়ার প্রতিশোধ হিসেবেও দেখছেন। শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলছেন, দেশটি তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এমন অভিযোগ শেখ হাসিনাই যে শুধু করছেন তা নয়, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর ইতিহাস আরও জটিল। ভারতীয় লেখক ও ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের ডিস্টিঙ্গুইশড ফেলো রামি দেশাই এক লেখায় এমনটি বলেছেন। সোমবার (৫ জুন) লেখাটি ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশ পায়।

বাইডেন প্রশাসনের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু-ও ‘বিশ্বব্যাপী এক কেন্দ্র থেকে গণতন্ত্রের জন্য প্রচার-প্রসারে’ কাজ করার কথা বলছেন।

নিবন্ধে রামি দেশাই বলেন, বিশ্বজুড়ে মার্কিন স্বার্থবিরোধী হওয়ার কারণে অথবা গণতন্ত্রের প্রয়োজনের কথা বলে কিংবা কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকলে সেসব দেশের ‘সরকার পতনে’ ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার নজির রয়েছে। আগের দিনে তাদের সংশ্লিষ্টতা বা কলকাঠি নাড়ার মাত্রা অনেকটাই সরাসরি ছিল, যেমন হাওয়াই, কিউবা ও ক্যারিবীয় দেশগুলোতে। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৭ সালে সিআইএ প্রতিষ্ঠার পর এ ধরণের কাজ বেশ লুকোছাপার মধ্য দিয়ে সমাধা করে যুক্তরাষ্ট্র। পরের দুই দশকের মধ্যে ১৯৫৩ সালে ইরানে, ১৯৫৪ সালে গুয়েতেমালায় ও ১৯৬৩ সালে ভিয়েতনাম তার উদাহরণ।

২০০০ সালে যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচের পতন ও ২০০৩ সালের ইরাক আক্রমণে সিআইএ’র ভূমিকা অনেকটাই স্পষ্ট। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাবিগনিউ ব্রেজাজেনস্কি সেসময় জর্জ ডব্লিউ বুশকে বোঝাতে চেয়েছিলেন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে।

লেখায় রামি দেশাই বলেন, দেখা গেছে, আরব বিশ্ব কোনো না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের আলোচনার বাইরেই থেকে যায়। এক রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ৮০টির মতো দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো- এসবের অর্ধেকের বেশি দেশে গণতান্ত্রিক শাসন নেই।

বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে রামি দেশাই বলেন, নির্বাচন যেহেতু দিনকে দিন নিকটে আসছে, শেখ হাসিনার উচিত হবে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করা। তবে ব্যাপকমাত্রায় হস্তক্ষেপের সম্মুখীন হয়েও শেখ হাসিনা রাখঢাক করেননি। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘তারা গণতন্ত্র হরণের চেষ্টা করছে এবং এমন একটি সরকার আনতে চাইছে যাদের গণতান্ত্রিক ভিত্তি নেই। এটি করা হলে তা অগণতান্ত্রিক হবে।’

বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমের অভিযোগে র‌্যাব কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আবার ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস সম্প্রতি নিখোঁজ বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বাড়িতে গিয়ে তার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন। এসবে বোঝা যায়, বাংলাদেশে গভীরভাবে দৃষ্টি রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এক্ষেত্রে ভারতকে পরিস্থিতি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেন রামি দেশাই। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে মার্কিন হস্তক্ষেপের ফলে ভারতের উত্তরপশ্চিম সীমান্ত পরবর্তী এলাকায় নাজুক পরিস্থিতির মুখে রয়েছে। একইভাবে উত্তরপূর্ব সীমান্তের ওপারে তেমনটি হলে আরও জটিলতা দেখা দিতে পারে।

রামি দেশাই বলেন, বিশ্ববাসীর জন্য এখন আর মোড়ল রাষ্ট্রের কোনো প্রয়োজন নেই। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল বর্তমান বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বরং উচিত হবে স্থানীয় জনগণকেই তাদের দেশের ভালমন্দ নির্ধারণের ক্ষমতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

Title